ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

আপনি কি জানেন ডেঙ্গু কি? ডেঙ্গু জ্বর কেন হয় এবং কাদের হয়? তাহলে চলুন জেনেনি ডেঙ্গু জ্বর কি এবং কেন হয়। এর থেকে নিজেকে এবং পুরো সমাজ রক্ষা করতে কি কি করতে হবে আমাদের।
ডেঙ্গু জ্বর কি?
ডেঙ্গু একটি ভাইরাস বাহিত কঠিন জ্বর জা ঈডিস ইজিপ্সাই নামক এক প্রকার মশার দ্বারা সংক্রমিত হয়। ডেঙ্গু ভাইরাস বা জ্বর প্রাথমিকভাবে এডিস মশা দ্বারা পরিবাহিত হয়।
ডেঙ্গু জ্বরের প্রকারভেদ?
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে-
১) সাধারন ডেঙ্গু জ্বর (Classical Dengue)।
২) রক্ত ক্ষরণকারী ডেঙ্গু (Dengue Haemorrhagic Fever of DHF)।
ডেঙ্গু জ্বর, বিশেষত রক্ত ক্ষরণকারী ডেঙ্গু (DHF), খুব তাড়াতাড়ি মহামারীর আকার নিতে পারে। এটি একটি প্রাণঘাতী ডেঙ্গু জ্বর। এই জ্বরে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
মনে রাখবেন আপনার দ্রুত পদক্ষেপই জীবন রক্ষার একমাত্র পথ। তাই যত তাড়াতাড়ি পারেন চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
ডেঙ্গু জ্বর কাদের বেশী হয়?
এই ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত শিশু, পর্যটক ও যাত্রীরা সবথেকে বেশী আক্রান্ত হয়। এছাড়া যে কোন মানুষও এই জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কি কিঃ
নিচের লক্ষণ গুলি দেখে আপনি ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন।
১) হটাৎ তীব্র জ্বর, মাথাব্যাথা, চোখের পিছনে, পেশীতে ও জোড়ে বাঁ গাঁটে গাঁটে ব্যথা।
২) খাদ্যে অরুচি, খাদ্যের স্বাদ বোধ কমে যাওয়া।
৩) বমি বমি ভাব, গা গুলানো, কালো পায়খানা, ডায়রিয়া, বাহুতে ও বুকে হামের মত গুটি দেখা দেওয়া।
৪) মুখ, মাড়ি, নাক থেকে রক্তক্ষরণ ও চামড়া ফেটে রক্ত বেরনো।
৫) রোগীর শ্বাস কষ্ট হওয়া।
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসাঃ
কোন দোকান থেকে অ্যাসপিরিন বা আইব্রুফেন কিনে খাবেন না বা নিজে নিজে কোনও ঔশুধ খাবেন না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার গৃহ চিকিৎসক বা PHC বা নিকটবর্তী কোন হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ঠিকমতো চিকিৎসা না হলে এই রোগে মৃত্যুও সম্ভব। তাই অবহেলা করবেন না।
ডেঙ্গু রোগের সাবধানতাঃ
১) ঘরের বা ঘরের আশেপাশে ফেলে রাখা ফুলের টব, অবেবহিত পাত্র, পুরনো টায়ার এর মধ্যে জল জমতে দেবেন না।
২) কুলার বা বাড়ির অন্যান্য জলাধার যেমন চৌবাচ্চার জল অন্তত সপ্তাহে একবার করে পাল্টান।
৩) জলের ট্যাঙ্ক, অন্যান্য বাসনপত্র, খাবার জলের পাত্র সবসময় ঢেকে রাখুন।
৪) বাড়ীর চারপাশ, নর্দমা ইত্যাদি সর্বদা পরিস্কার পরিছন্ন রাখুন।
৫) কিছু কিছু মাছ যারা মশার লার্ভা বা শূককীট খায়। তাই জলের ট্যাঙ্ক, কুয়ায়, বা ডোবায় এইসব ছোট মাছের চাষ করুন। পারেন তো শূককীট মারার ঔষধ জলে দিন।
৬) চেষ্টা করবেন সবসময় শরীর ঢাকা জামা কাপড় পরার।
৭) দিনে পড়ার বা ঘরের কাজ করার সময় মশা তাড়ানোর ক্রিম ব্যাবহার করুন।
৮) ঈডিস মশা শেষরাতেও মানুষকে কামড়ায়। তাই রাতে সবসময় মশারী ব্যাবহার করুন।
৯) ঘরের মধ্যে কোন ঝুলন্ত জিনিস বা আসবাবপত্র থাকে তাহলে তা সবসময় পরিস্কার পরিছন্ন রাখুন।
মনে রাখবেনঃ
ডেঙ্গু মশা কে সুখী মশা বলা হয়ে থাকে। এই মশা সাধারণত পরিস্কার জলে ডিম পাড়ে। এরা কখনই নোংরা বা ড্রেনে জমা জলে ডিম পাড়ে না। তাই ঘরের মধ্যে বা ঘরের মেঝে তে কোন জিনিস যেমন ফুলের টব, প্লাস্টিক ও পলিথিন বা ছোট ছোট কৌটো ইত্যাদি ফেলে রাখবেন না। এর মধ্যে বর্ষার জল জমতে পারে। আর এই জলের মধ্যে ডেঙ্গু মশারা ডিম পাড়ে। আবার দেখা যায় অনেক বাড়ীর ছাদে বা টিনের চালের মধ্যে পুরনো টায়ার রাখা আছে এবং এর মধ্যে জল জমে আছে। ফলে এখানে মশারা ডিম পাড়ার সুযোগ পায়। বর্তমানে অনেক বাড়িতে ফ্রিজ আছে এবং এই ফ্রিজের পিছনে একটি পাত্রে জল জমা থাকে। এখানেও ডেঙ্গু মশারা ডিম পাড়ে। তাই এই ফ্রিজের পিছনে জমা জল যাতে নিয়মিত পরিস্কার করা হয় সেই দিকে একটু খেয়াল রাখবেন। ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ কমাতে এই সমস্ত জায়গা সবসময় পরিস্কার রাখতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর এর প্রকোপ সাধারণত বছরের মার্চ মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বেশি থাকে। কিন্তু এখন এই জ্বর সারা বছর হচ্ছে। এই ডেঙ্গু জ্বর কে আমাদের দেশ থেকে নির্মূল করার জন্য সরকার বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ নিয়ে থাকে। কিন্তু শুধু সরকার একা উদ্যোগ নিলে এই ডেঙ্গু নির্মূল হবে না তার সাথে সাথে আমাদের কেও সচেতন হতে হবে। সরকারের উদ্যোগে প্রতি মাসে সরকারি স্বাস্থ্য কর্মীরা আপনার বাড়িতে সার্ভে করতে যায় এই জ্বর সম্পর্কে সচেতন করতে। তাই যতটা পারবেন এদের সাহায্য করবেন।
যদি কারো ডেঙ্গু জ্বর হয় তাহলে ঘাবড়াবেন না। সাথে সাথে কোন নিকটবর্তী সরকারি হাসপাতাল বাঁ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যান। মনে রাখবেন ডেঙ্গু জ্বর এর চিকিৎসা বিনামূল্যে হয়। যদি সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা করা হয় তাহলে রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।