অতিরিক্ত কম ওজন বা বেশী ওজন দুটোই সুস্থতার জন্য ক্ষতিকর। নারী ও পুরুষের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত? উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের আদর্শ ওজন কত হওয়া উচিত তা আমরা অনেকেই জানিনা। আপনার উচ্চতা অনুযায়ী ওজন সঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিন এখনি, আপনার অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ওজনকে আদর্শ অবস্থানে আনার জন্য চেষ্টা করুন। কেবল মাত্র সুন্দর থাকা মানেই ভালো থাকা নয়, সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার নামই সত্যিকারের ভালো থাকা। উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ঠিক আছে কিনা আমাদের তা লক্ষ রাখতে হবে।
সূচিপত্র
আদর্শ ওজন নির্ণয়ের পদ্ধতিঃ
আদর্শ ওজন নির্ণয়ে একজন ব্যক্তির ওজন কেজিতে আর মিটারে মাপা হয়। শরীরের এই ওজনকে তার উচ্চতার বর্গফল দিয়ে ভাগ করা হয়। এই ভাগফলকেই বলা হয় বিএমআই (BMI)। বিএমআই ১৮ থেকে ২৪-এর মধ্যে হলেই তা স্বাভাবিক বলে ধরা হয়।
সেনাবাহিনীতে উচ্চতা অনুযায়ী ওজনঃ
অনেকেরই মনে প্রশ্ন, সেনাবাহিনীতে উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কত হলে কোনো সমস্যা হবে না। সেনাবাহিনিতে তাদের নিজস্ব একটা প্যারামিটার আছে। এটি আবার BMI এর সাথে মিলবে না। আবার দেশ অনুযায়ী এই প্যারামিটার আলাদা আলাদা হয়। আবার সেনাবাহিনীর পোস্ট অনুযায়ীও এই মাপদন্ড আলাদা আলাদা হয়। তাই সেনাবাহিনীতে নিয়োগের বিজ্ঞাপন ফলো করুন।
এখানে বাংলাদেশে সেনাবাহনিতে নিয়োগের মাপদন্ড দেওয়া হল। এই অনুনয়ী ওজন হলে সেনাবাহিনীতে কোনো সমস্যা হবে না।
দেহের উচ্চতা (kg) | দেহের ওজন ( kg) |
৫ ফুট ৬ ইঞ্চি | ৫০ কেজি -৫৫ কেজি |
৫ ফুট ৭ ইঞ্চি | ৫৬ কেজি-৫৯ কেজি |
৫ ফুট ৮ ইঞ্চি | ৬০ কেজি-৬৫ কেজি |
৫ ফুট ৯ ইঞ্চি | ৬৫ কেজি-৬৯ কেজি |
৫ ফুট ১০ ইঞ্চি ও তার বেশি | ৬৯ কেজি-৭৫ কেজি |
নারী বা পুরুষের উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন
উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা হয়। নারী পুরুষের আলাদা আলাদা ভাবে উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের আদর্শ ওজন কত হওয়া উচিত আসুন আমরা জেনে নিই।
উচ্চতা | পুরুষ (কে.জি) | নারী (কে.জি) |
৪.৭’’ | ৩৯-৪৯ | ৩৬-৪৬ |
৪.৮’’ | ৪১-৫০ | ৩৮-৪৮ |
৪.৯’’ | ৪২-৫২ | ৩৯-৪৯ |
৪.১০’’ | ৪৪-৫৪ | ৪১-৫২ |
৪.১১’’ | ৪৫-৫৬ | ৪২-৫৩ |
৫.০০’’ | ৪৭-৫৮ | ৪৩-৫৫ |
৫.১’’ | ৪৮-৬০ | ৪৫-৫৭ |
৫.২’’ | ৪৯-৬২ | ৪৬-৫৯ |
৫.৩’’ | ৫১-৬৪ | ৪৮-৬১ |
৫.৪’’ | ৫৩-৬৬ | ৪৯-৬৩ |
৫.৫’’ | ৫৫-৬৮ | ৫১-৬৫ |
৫.৬’’ | ৫৬-৭০ | ৫৩-৬৭ |
৫.৭’’ | ৫৮-৭২ | ৫৪.৬৯ |
৫.৮’’ | ৬০-৭৪ | ৫৬-৭১ |
৫.৯’’ | ৬২-৭৬ | ৫৭-৭৩ |
৫.১১’’ | ৬৫-৮১ | ৬১-৭৭ |
৬.০০’’ | ৬৭-৮৩ | ৬৩-৮০ |
৬.১’’ | ৬৯-৮৬ | ৬৫-৮২ |
৬.২’’ | ৭১-৮৮ | ৬৭-৮৪ |
কীভাবে অতিরিক্ত ওজন কমাবেন?
১. প্রাতঃরাশ এড়িয়ে যাবেন নাঃ
প্রাতঃরাশ এড়িয়ে যাওয়া আপনাকে ওজন কমাতে সহায়তা করবে না। আপনি প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলি মিস করতে পারেন এবং সারাদিন ক্ষুধার্ত বোধ করবেন ফল স্বরূপ সারা দিন ধরে আরও বেশি খাবার খাবেন।
২. নিয়মিত খাবার খানঃ
সারাদিন নিয়মিত সঠিক সময়ে আহার করুন।
৩. প্রচুর পরিমাণে ফল এবং নিরামিষ ভোজন করুনঃ
ফল এবং সাকসব্জিতে ক্যালরি এবং ফ্যাট কম থাকে এবং ফাইবার এর পরিমান বেশি থাকে।
৪. আরও সক্রিয় হন ও কাজকর্ম করুনঃ
কর্মঠ হোন, ব্যায়াম করুন যা অতিরিক্ত ডায়েট ক্যালোরিগুলি পোড়াতে সহায়তা করতে পারে।
৫. প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুনঃ
শরীর সুস্থ রাখতে এক জন সুস্থ মানুষের দিনে ৩/৪ লিটার পানি খাওয়া উচিত। যা ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
৬.উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খানঃ
যেমন ফল এবং নিরামিষাশী, ওটস, আস্ত রুটি, বাদামি চাল এবং পাস্তা এবং সিম, মটর এবং মসুর জাতীয় খাবারে ফাইবার পাওয়া যায়।
৭. খাবারের লেবেল পড়ুনঃ
খাদ্য লেবেলগুলি কীভাবে পড়তে হবে তা জেনে রাখা আপনাকে স্বাস্থ্যকর বিকল্পগুলি বেছে নিতে সহায়তা করতে পারে। ওজন হ্রাসের পরিকল্পনায় কোনও নির্দিষ্ট খাবার আপনার প্রতিদিনের ক্যালোরি ডাটার মধ্যে কীভাবে ফিট করে তা কার্যকর করার জন্য লেবেলে দেওয়া ক্যালোরির তথ্য দেখুন।
৮. খাওয়ারের জন্য একটি ছোট প্লেট ব্যবহার করুনঃ
ছোট প্লেট ব্যবহার করা আপনাকে আরও কম খাওয়ার খেতে সহায়তা করতে পারে। এতে বেশি আহার করার অভ্যাস দূর হতে পারে।
৯. খাবার বেছে বেছে খাবেন নাঃ
অনেক খাবার যা আপনার পছন্দ নয় কিন্তু যা ওজন কমানোর শর্তে পূর্ন এমন খাবার এড়িয়ে যাবেন না।
১০. জাঙ্ক ফুড বাড়িতে মজুত করে রাখবেন নাঃ
প্রলোভন এড়ানোর জন্য, জাঙ্ক ফুড – যেমন চকোলেট, বিস্কুট, চিপস এবং মিষ্টি, পানীয় বাড়িতে ফিজ ভর্তি করে রাখবেন না। পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস যেমন ফল, আনসলেটেড রাইস কেক, ওট কেক, আনসাল্টেড বা আনস্টিভড পপকর্ন এবং ফলের রস বেছে নিন।
১১. অ্যালকোহল পান জীবন থেকে ছেটে ফেলুনঃ
অ্যালকোহল পান করার অভ্যাস থাকলে তা ছেরে দিতে হবে। শরীরে মেধ বৃদ্ধির অন্যতম কারন অ্যালকোহল পান।
১২. আপনার খাবারের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা রুটিন করুনঃ
প্রতিদিন একই সময়ে খেতে হবে। জা হজম শক্তি বারাবে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করবে।
এছারাও আর দেখে নিনঃ ওজন কমানোর কার্যকরী উপায়সমূহ
কম ওজনের হলে ওজন বাড়ানোর কয়েকটি স্বাস্থ্যকর উপায় এখানে রইল:
- পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার বেছে নিন। যেমন দুধ, মাখন, বাদাম ইত্যাদি।
- কম কম করে অনেকবার আহার করুন।
- সঠিক সময়ে পানি পান করুন। খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে এবং পরে পানি পান করা ভালো।
- মাঝে মাঝে ট্রিট করুন।
- অনুশীলন,ব্যায়াম করুন।
শরীর অতিরিক্ত রুগ্ন হলে দেখতে খারপতো দেখাবেই, অপুষ্টিকর এ শিকার হলে চুল পড়া, দাঁত নষ্ট হওয়া, হাড় খয়ে যাওয়া সহ নানা রকম রোগ হতে পারে। আবার শরীরে অতিরিক্ত চর্কি জমার কারনে মোটা হয়ে যায় বা ভুঁড়ি বেড়ে যায়। ফ্যাট সেল বা চর্বিকোষ আয়তনে বাড়ে তখন শরীরে চর্বি জমে যায় এবং নানান রকমের সমস্যা হয়ে থাকে। তাই আপনার সঠিক উচ্চতা অনুযায়ী সঠিক ওজন আয়ত্ত করুন।
আপনাদের সুস্থতাই আমাদের কামনা।