তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

তুলসী পাতার গুণাবলি অনেক। শিশু থেকে বয়স্ক যেকোনো বয়সের মানুষের ঠান্ডা, সর্দি-কাশির মত রোগবালাইয়ের জন্য তুলসী পাতা মহৌষধ। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন মাত্র একটি কর তুলসী পাতা চিবিয়ে খেয়েই নিজেকে সুস্থ রাখতে পারবেন। প্রাচীন কাল হতেই বাংলার ঘরে ঘরে তুলসী পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে। বিশেষ করে তুলসী চা বর্তমান সমাজে বহুল ব্যবহৃত একটি পানীয়। তুলসী একটি ছোট গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ যা ২-৪ ফুট উচু হয়ে থাকে। শীতকালে এর ফুল ও ফল হয়। তুলসী পাতা বিশেষ ধরণের সুগন্ধিযুক্ত, কটু তিক্তরস, উষ্ণবীর্য, উত্তেজক ও রুচিকর। তুলসী গাছের পাতা ও শিকড় ব্যবহার হয়ে থাকে। তুলসী বিভিন্ন ভাষায় পরিচিত যেমন- সুরসা, তুলসী(সংস্কৃত), তুলসী(বাংলা), তুলশী(তামিল), তুলসী(হিন্দি), উলসী বাদরুজ (আরবী)।

তুলসী পাতার ব্যবহার:  এটি সর্দি, কাশি, কৃমি ও বায়ুনাশক এবং মূত্রকর, হজমকারক ও এন্টিসেপ্টিক  হিসেবে ব্যবহার হয়।

তুলসী পাতার পুষ্টি উপাদান

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দফতরের তথ্য অনুসারে, নিচে ১ টেবিল চামচ (২.৬ গ্রাম) তাজা তুলসী পাতার পুষ্টি উপাদান দেখানো হলো:

পুষ্টি উপাদান১ টেবিল চামচ (২.৬ গ্রাম) তুলসী পাতার রসে পুষ্টি উপাদানএকজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রয়োজন
ক্যালসিয়াম৪.৬ মিলি গ্রাম১,০০০-১,৩০০
ভিটামিন-এ৬.৯ মাইক্রোগ্রাম৭০০-৯০০
ভিটামিন-কে১০.৮ মাইক্রোগ্রাম৭৫-১২০
বেটা ক্রিপ্টোক্সাথিন১.২ মাইক্রোগ্রাম
লুটেইন এবং জেক্সানথিন১৪৭ মাইক্রোগ্রাম
বেটা ক্যারোটিন৮১.৭ মাইক্রোগ্রাম

তুলসী পাতার উপকারিতা

  • শিশুদের সর্দি-কাশিতে এটি বিশেষ ফলপ্রদ। তাজা তুলসী পাতার রস মধু, আদা ও পিয়াজের রসের সাথে একত্রে পান করলে সর্দি এবং হাঁপানি ভালো হয়।
  • যারা সহজেই সর্দিতে আক্রান্ত হয় তারা কিছুদিন ৫ ফোঁটা  মধুর সাথে ১০ ফোঁটা রস খেলে সর্দিপ্রবণতা দূর হয়।
  • পানিতে তুলসী পাতার সঙ্গে এলাচ ফুটিয়ে পান করলে জ্বর ভালো হয়।
  • পাতা ও শিকড়ের ক্বাথ ম্যালেরিয়া জ্বরে বেশ হিতকর। ম্যালেরিয়ার প্রতিরোধ হিসাবে প্রত্যহ সকালে গোল মরিচের সাথে তুলসী পাতার রস খেতে হয় ।
  • প্রত্যহ সকালে তুলসী পাতার রস খেলে পুরাতন জ্বর, রক্তক্ষয়, আমাশয়, রক্ত অর্শ এবং অজীর্ণ রোগ আরোগ্য হয়।
  • ব্রংকাইটিস, অ্যাজমা, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং ঠাণ্ডা-সর্দিতে তুলসী পাতার সঙ্গে মধু ও আদার মিশ্রণ দারুণ কাজ করে।
  • খালি পেটে তুলসীর পাতা খেলে কিডনির পাথর দূর হয়। বহুকাল ধরে কিডনির পাথর দূরীকরণে এ চিকিৎসা নেওয়া হয়।
  • মুখের দুর্গন্ধ, দাঁতের ক্ষয়সহ অন্যান্য দন্ত চিকিৎসায় তুলসী অতুলনীয়। পুঁজযুক্ত স্রাবের চিকিৎসায়ও তুলসী ব্যবহৃত হয়।
  • রাতকানা রোগ সারাতে প্রাচীনকাল থেকে তুলসী পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে।
  • দেহ থেকে বিষাক্ত উপাদান দূর করে তুলসী পাতা। বহু বিশেষজ্ঞের দাবি, ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও তুলসী ভালো ফল দিতে পারে।
  • তুলসী, কন্টিকরি, গুলঞ্চ, আদা ও ভূমিজম্বুর সমপরিমাণ ক্বাথ ফুসফুস সম্বন্ধীয় সকল পীড়ায় অত্যন্ত উপকারী।
  • তুলসী পাতার রসে মধু মিশিয়ে খাওয়ালে বাচ্চাদের পেট কামড়ানি, কাশি ও লিভার দোষে উপকার পাওয়া যায়।
  • তুলসী পাতা ও দুর্বা ঘাসের ডগা বেটে গায়ে মাখলে ঘামাচি ও চুলকানি ভাল হয়। তুলসী পাতার রস স্থানীয়ভাবে দাউদ ও অন্যান্য চর্মরোগে প্রয়োগে বেশ উপকার পাওয়া যায়। পাতার রস ফোঁটা ফোঁটা করে কানে দিলে কানের ব্যথা সেরে যায়।
  • বসন্ত, হাম প্রভৃতি রোগে তুলসী পাতার রস খেলে তাড়াতাড়ি উপকার পাওয়া যায়।
  • তুলসী পাতার রসের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে সেবন করলে ক্রিমি রোগে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
  • শুষ্ক তুলসী পাতার ক্বাথ সর্দি, স্বরভঙ্গ, বক্ষপ্রদাহ, উদরাময় প্রভৃতি রোগ নিরাময় করে থাকে।
  • অজীর্ণজনিত পেট বেদনায় তুলসী পাতার রস বেশ উপকার সাধন করে থাকে। ইহা হজমকারক।
  • বাত বেদনায় আক্রান্ত স্থানে তুলসী পাতার রসে ন্যাকড়া ভিজিয়ে পট্টি দিলে বেদনা আরোগ্য হয়।
  • মানবদেহের যেকোনো ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে তুলসীর পাতা অনন্য। এতে রয়েছে জীবাণুনাশক ও সংক্রমণ শক্তিনাশক উপাদান। বোলতা, ভীমরুল, বিছা প্রভৃতি বিশাক্ত কীটনাশক দংশন করিলে দংশিত স্থানে তুলসী পাতার রস গরম করে লাগালে জ্বালা, যন্ত্রণা উপশম হয়।
  • তুলসী মূল শুক্র গাঢ় কারক। তুলশী পাতার ক্বাথ, এলাচ গুড়ো এবং এক তোলা পরিমাণ সালেম মিছরী পান করলো ধাতুপুষ্টি সাধিত হয়।  ইহা অত্যন্ত  ইন্দ্রিয় উত্তেজক। প্রত্যহ এক ইঞ্চি পরিমাণ তুলসী গাছের শিকড় পানের সাথে খেলে ধ্বংজভংগ রোগ আরোগ্য হয়।

মশার উপদ্রবে তুলসী পাতা

কথিত আছে বাড়িতে অধিক পরিমাণ তুলসী গাছ থাকলে মশার উপদ্রব কমে যায়। এজন্য ব্রিটিশরা যখন ভারতে প্রথম পা রাখে তখন মশার অত্যাচার থেকে বাঁচতে তুলসী গাছের শরণাপন্ন হয়। তারা তুলসী ও নিমের গাছ লাগানো শুরু করে। তুলসী গাছের গুণাগুণ দেখে ব্রিটিশরা বিস্মীত হয়। তুলসী গাছ থাকলে মশার উপদ্রপ কম থাকে বিধায় তারা একে বলত ‘মসকিউটো প্লান্ট’। এছাড়াও তুলসীতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ফাংগাল উপাদান রয়েছে।

তুলসী পাতার অপকারিতা

যাদের এলার্জী আছে তাদের তুলসী পাতার রস সেবনে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। তাছাড়া বেশি পরিমাণে তুলসী পাতার রস সেবন করলে কিছু কিছু ঔষধের কার্যকারিতা হ্রাস করে থাকে। ভিটামিন-কে রক্ত জমাট বাধতে সহায়তা করে। তুলসী পাতায় প্রচুর ভিটামিন ডি রয়েছে। এজন্য যাদের রক্ত হালকা করা প্রয়োজন তাদের ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণ তুলসীর রস সেবন না করাই উত্তম।

শেষ কথা

কিছু ক্ষতিকর দিক থাকলেও তুলসী পাতার উপকারিতা অনেক টা আপনারা ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছেন। তাই আমাদের উচিৎ একটি হলেও বাসায় তুলসী গাছ লাগানো। আপনার বাসার বারান্দায় বা যেখানে আলো–বাতাস ভাল মত চলাচল করে এমন জায়গায় তুলসীগাছ লাগাতে পারবেন। কারন হাতের কাছে তুলসী পাতা থাকলে আমরা অনেক রোগবালাই থেকে মুক্তি পেতে পারবেন বা প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন।

Leave a Comment