ল্যাপটপ কেনার আগে ১০ টি টিপস

বহনযোগ্যতা (Portability) ও টেক ফ্যাশন স্টেটমেন্ট এর প্রচলনেই ল্যাপটপ ও নোটবুকের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। ট্যাবলেট পিসি ও স্মার্টফোন আধুনিকতম হলেও বহুমুখী ব্যবহার ও কার্যক্ষমতার জন্য ল্যাপটপই এখন ডেস্কটপ পিসির বিকল্প।

আর ল্যাপটপ কিনতে গেলেই প্রশ্ন আসে কোন ল্যাপটপটি সবথেকে ভালো, কোন ল্যাপটপটিতে রয়েছে প্রয়োজন অনুযায়ী সব ফিচার। এই প্রশ্নের পরিষ্কার কোন উত্তর নেই – বিভিন্ন ধরণের চাহিদার অনুপাতে বিভিন্ন দামে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ল্যাপটপ। তাই মোদ্দা পরিমান একটা টাকা ল্যাপটপ কিনতে ব্যয়ের পূর্বে, অবশ্যই যে ফিচারগুলো বিবেচনা করে ল্যাপটপ পছন্দ করা উচিত সেগুলো উপস্থাপন করছি আপনাদের জন্য –

০১. সাইজ

বহনযোগ্যতাই যদি আপনার কাছে মুখ্য হয়ে থাকে তবে আপনাকে এমন একটি ল্যাপটপ বা নোটবুক নির্বাচন করতে হবে যেটার স্ক্রিন ছোট এবং ওজনে হাল্কা। সাধারনত যেকোন ল্যাপটপ ব্র্যান্ডের আলট্রাবুক ভার্সন এরকম ভাবে ডিজাইন করা হয়ে থাকে – হালকা ও পাতলা। মাথায় রাখবেন, পোর্টেবিলিটির জন্য সেই ল্যাপটপগুলোই সবথেকে ভালো যেগুলোর ডিসপ্লে স্ক্রিন ১২,৫-১৩.৩ ইঞ্চি এবং ওজনে ১ থেকে ১.৫ কেজির মধ্যে।

০২. স্ক্রিন কোয়ালিটি

আমরা ল্যাপটপ ব্যবহারই করি এজন্য যাতে আমরা তা প্রয়োজনে সব জায়গায় নিয়ে যেতে পারি এবং অনেক সময় ধরে অবিরাম কাজ করতে পারি। আর যেহেতু অনেক সময় ধরে ল্যাপটপে কাজ করতে হয়, স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকতে হয় তাই এটা নিশ্চিত করা উচিত যে আপনার ল্যাপটপের স্ক্রিন চোখের জন্য আরমদায়ক। গ্লসি স্ক্রিনে আলো বেশি প্রতিফলিত হয়, তাই তা চোখের জন্য কম আরামদায়ক। সাধারনত ম্যাট ফিনিশিং এর স্ক্রিন এই ক্ষেত্রে ভালো। অনেক ল্যাপটপে এখন টাচস্ক্রিন থাকে। আর টাচস্ক্রিনগুলো সাধারণত গ্লসি ডিসপ্লে হয়ে থাকে। তাই Glare Free টেকনোলজি ব্যতীত টাচস্ক্রিন আছে এমন ল্যাপটপ না কেনাই ভালো। এবার, আপনার বিবেচনা করতে হবে স্ক্রিন রেসলুশন। আপনি যদি আপনার স্ক্রিন এর সবথেকে আরামদায়ক ব্যবহার করতে চান তবে Full HD (1920×1080-pixel) Resolution নির্বাচন করুন। একি সাথে, ভিউইং অ্যাঙ্গেল ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে ল্যাপটপ স্ক্রিনের IPS (In-Plane Switching) টেকনোলজি রয়েছে সে স্ক্রিন এর Widest Viewing Angles এর জন্য ব্যবহারে সবথেকে আরামদায়ক।

পরিশেষে, কখনই অন্ধের মত কিনবেন না। পারলে একটি ল্যাপটপ কেনার আগে একটি স্টোরে যেয়ে তার ডিসপ্লে দেখে নিন। আর না হলে, ডিসপ্লের ব্যাপারে কয়েকটি রিভিউ পরে নিতে পারেন।

০৩. কীবোর্ড

আপনি যদি অনেক টাইপিং এর কাজ করেন, তাহলে একটু মানসম্পন্ন ও আরামপ্রদ কীবোর্ড আছে এমন একটি ল্যাপটপ খুঁজুন। ভালো ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এর জন্য এমন কীবোর্ড দেখুন যেটাতে সব ও অত্যাধিক বাটন ব্যবহার করা হয়নি। এমন কীবোর্ড দেখুন যেটার লে-আউট প্রশস্ত, কী-বাটন গুলো প্রমান সাইজের এবং বাটনের চারপাশে সামান্য স্পেইস আছে। আর অবশ্যই আপনার কীবোর্ড এর যাতে ব্যাকলাইট থাকে, যাতে আপনি অল্প আলোতেও টাইপ করতে পারেন।

০৪. সিপিইউ (CPU)

আপনি যখন ল্যাপটপ বা পিসি কিনবেন, তখন প্রথম পছন্দ হয়ে থাকে INTEL এর Core-বেসড প্রসেসর। Core i3, Core i5 এবং Core i7 প্রসেসর কে বিবেচনায় রাখতে পারেন। মাল্টি-টাস্কিং এবং মাল্টিমিডিয়া কন্সাম্পশন এর জন্যও এই প্রসেসরগুলোও অনেক ভালো। Core i3 কম্পিউটারগুলো এন্ট্রি লেভেল সিস্টেমের জন্য, আর মেইনস্ট্রিম কম্পিউটারগুলোর অধিকাংশতেই Core i5 ব্যবহৃত হয়। আর ল্যাপটপের সবথেকে সেরা পারফর্মেন্সের জন্য Core i7 প্রসেসর ব্যবহার করুন। তবে এ ক্ষেত্রে হিট-ইস্যুর ব্যপারে সচেতন থাকুন।

০৫. ইউএসবি ৩.০ (USB 3.0)

বর্তমান সময়ে USB 3.0 পোর্ট ছাড়া ল্যাপটপ কেনাই উচিত নয়। আর খুব ভালো হয় আপনি যদি এমন ল্যাপটপ কিনুন যেটাতে একাধিক USB 3.0 পোর্ট আছে। আমাদের নিত্য প্রয়োজনে USB পোর্ট অনেক বেশী ব্যবহৃত হয় – হোক তা ডাটা ট্রান্সফারে কিংবা গেমিং কীবোর্ড ও মাউস ল্যাপটপের সাথে লাগাতে।

০৬. র‍্যাম (RAM)

আপনার ল্যাপটপ সিস্টেমের সবথেকে সেরাটা পেতে হলে আপনাকে 4 GB বা এর অধিক র‍্যাম ব্যবহার করতে হবে। র‍্যাম যত বেশী হবে তত বেশী এপ্লিকেশন একি সময়ে একি সাথে রান করতে পারবেন। এবং র‍্যাম বেশী থাকলে যে কোন ডাটা দ্রুত সিস্টেম থেকে বের করে আনাও সহজ হয় জা অনেক কাজেই অনেক উপকারি।

০৭. স্টোরেজ

হার্ড ড্রাইভ এর একটা সময় খুব চল ছিল। কিন্তু বর্তমানে চিকন এবং হালকা ওজনের ল্যাপটপের জন্য এই হার্ড ড্রাইভের প্রচলন প্রায় বিলুপ্ত। কারন, এই একটু ভারী গঠনের হার্ড ড্রাইভগুলো একটু স্লো হয় এবং অতিরিক্ত হীট আর শব্দ তৈরি করে। বর্তমানের চল হল সলিড স্টেট ড্রাইভ (Solid State Drive – SSD)। এর স্পীড অনেক বেশী, চলেও নিঃশব্দে এবং এর হালকা গড়ন ল্যাপটপের ওজনও খুব একটা বাড়ায় না। তবে SSD সাধারণত 128 GB এবং 256 GB – এই দুই সাইজে পাওয়া যায়। এবং SSD র দামটাও একটু বেশী। তবে আপনি যদি SSD চালান, তবে আপনি খুবই পছন্দ করবেন যে কত দ্রুত এটি যে কোন প্রোগ্রাম লোড করে, ডাটা অ্যাক্সেস করে এবং সিস্টেম বুট আপ করে।

০৮. ব্যাটারি লাইফ

যদিও ব্যাটারি লাইফ দ্বারা একটি ল্যাপটপের পারফরমেন্স বিচার করা যায়না, তবে ল্যাপটপের ব্যাটারি লাইফ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। আপনার স্ক্রিন ডিসপ্লের ভালো রেসলুশন পেতে, অনলাইন ভিডিও স্ট্রিম করতে, কয়েকটি প্রোগ্রাম একসাথে চালাতে বা অনেকগুলো ফাইল ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কে ট্রান্সফার করতে হলে আপনার খুবই শক্তিশালী একটি ব্যাটারি লাগবে।

ল্যাপটপ কেনার আগে ব্যাটারি অবশ্যই জাচাই করে নিন। Watt-hours (Wh) বা milliamp-hours (mAh) মান কত ব্যাটারির তা দেখে নিন। এই নাম্বার এবং ব্যাটারি সেল এর সংখ্যা যত বেশী হবে ব্যাটারিতে চার্জ তত বেশী থাকবে। একটি 13.3” এর আলট্রাবুক ল্যাপটপের জন্য 44Wh থেকে 50Wh এর ব্যাটারি যথেষ্ট।

০৯. ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং এবং ব্লু-টুথ

অনেকেই অনেক সময় ল্যাপটপ কেনার সময় এ ব্যাপারটিতে খেয়াল রাখতে ভুলে যান। কিন্তু যেহেতু আমাদের যাবতীয় কাজ করতেই আমাদের ল্যাপটপকে ইন্টারনেট এর সাথে কানেক্টেড করে রাখতে হয়, তাই এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার। আপনার ল্যাপটপের অবশ্যই ডুয়াল-ব্যান্ড ওয়াই-ফাই অ্যাডাপ্টার থাকতে হবে। এতে আপনি ডুয়াল-ব্যান্ড রাউটারের 5GHz এর দ্রুততর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবেন। আর ব্লু-টুথ এর ক্ষেত্রে ব্লু-টুথ ৪.০ আছে কিনা দেখে ল্যাপটপ কিনুন। শুধুমাত্র ওয়্যারলেস মাউস বা কীবোর্ড কানেক্ট করতেই নয়, ওয়্যারলেস Hi-Fi সিস্টেম কানেক্ট করতেও এটি অত্যন্ত চমৎকার। লোকাল ড্রাইভে বা গুগল প্লে ও অন্য অনলাইন রেডিও পোর্টাল থেকে মিউজিক বাঁজাতে এই ব্লু-টুথ ৪.০ অনেক ভালো সার্ভিস দেয়।

১০. ফুল-সাইজড এসডি কার্ড

আপনার কি কি কাজে ফুল-সাইজড এসডি কার্ডের দরকার হয়? ধরুন, আপনি যদি একজন ফটোগ্রাফার হন বা যদি আপনার ফটোগ্রাফির শখ থাকে, তাহলে আপনি ক্যামেরা থেকে ছবিগুলো দ্রুত ল্যাপটপে নিয়ে মেমরি কার্ড ফ্রি করতে সবথেকে ভালো পন্থা হল এসডি কার্ড স্লট। যদিও ডাটা ট্রান্সফারের জন্য এখন ওয়াই-ফাই ব্যবহার করা হয়, কিন্তু এসডি কার্ড ব্যবহারটাই সবথেকে ঝামেলামুক্ত উপায়। যে এসডি কার্ড স্লটগুলোতে কার্ড পুরো ইন্সারট হয়, অর্ধেক বের হয়ে থাকেনা এরকম ল্যাপটপই উত্তম পছন্দ।

স্বাভাবিক ভাবেই, আপনার নিজস্ব কিছু চাহিদা থাকতে পারে এবং নির্দিষ্ট একটা বাজেট এর সমান্তরালে তা পুরন করতে হবে। সব ফিচার সম্বলিত ল্যাপটপ হয়ত আপনি আপনার বাজেটে নাই পেতে পারেন, তারপরও সব বিষয় ও ফিচারগুলো ভালো ভাবে বিবেচনা করে বাজেট আর চাহিদার সব থেকে উত্তম সমন্বয় যে ল্যাপটপটিতে হয় সেটাই কেনা বুদ্ধিমানের কাজ।

Leave a Comment