শুক্র গ্রহ কি একসময় প্রাণ ধারণের উপযোগী ছিল? | Venus Planet

আমাদের সৌরমন্ডলে আট গ্রহ একটি সূর্য । এখানে আছে একটি সব থেকে আলাদা জায়গা যেখানে এই ব্রহ্মাণ্ডের সবথেকে বুদ্ধিমান প্রাণী মানুষ বাস করে আর এই আলাদা জায়গাকে আমরা ভালোবাসার সাথে বলে থাকি পৃথিবী আমাদের পৃথিবী । বিজ্ঞানীদের মত অনুসারে পৃথিবী তৈরি হতে প্রায় সাড়ে চার আরব বছর সময় লেগেছিল কিন্তু শুধু কি আমরাই এতটা ভাগ্যবান ছিলাম যে আমাদের পৃথিবী একটি নিষ্প্রান জায়গা থেকে জীবন সমৃদ্ধ গ্রহতে রুপান্তরিত হয়েছে । নাকি আমাদের সৌরমণ্ডলের অন্য কোন প্লানেটেও কোনো এক জীবনের অস্তিত্ব ছিল কিন্তু কিছু কারণের জন্য আজ সেই সব গ্রহ নিষ্প্রান হয়ে পড়েছে । সত্যিই কি এমন কিছু ছিল । আপনি নিশ্চয়ই এটা শুনেছেন যে বিজ্ঞানীরা বলেন মারস আর ভিনেস বা শুক্র গ্রহতেও একসময় পৃথিবীর মত সমুদ্রের অস্তিত্ব ছিল ।

কিন্তু যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে আজ সেসব কোথায় হারিয়ে গেছে । যদি পৃথিবীর জমজ বোন ভেনাস বা শুক্র গ্রহে কখনো জলের অস্তিত্ব ছিল তাহলে কোন ঘটনার জন্য আজ ভেনাস বা শুক্র এমন হয়ে গেছে আর ভেনাস আমাদের কি এটা বলে দেয় যে আমাদের পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কখনো এমনই হয়ে যাবে । তো চলুন জেনে নেওয়া যাক ভেনাস বা শুক্র গ্রহের কাহিনী শুরু থেকে ।

সৌরজগৎআমাদের সোলার সিস্টেমে চারটি Rocky Planets আছে । সূর্য থেকে দূরত্ব অনুসারে মার্কারি,ভেনাস ,আর্থ আর মার্স । মার্কারি মানে বুধ গ্রহ সূর্যের সব থেকে কাছের গ্রহ কিন্তু আমাদের সৌরমণ্ডলের সবথেকে গরম প্লানেটস ভেনাস মানে শুক্র । যার সারফেস টেম্পারেচার ৪৬২ ডিগ্রী সেলসিয়াস আর এর সাথেই ভেনাস বা শুক্র আমাদের সৌরমণ্ডলের একমাত্র এমন গ্রহ যে নিজের কক্ষপথে উল্টো দিকে পরিক্রমন করে । ভেনাস বা শুক্র গ্রহতে সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হয় এবং পূর্ব দিকে অস্ত যায় কিন্তু এই গ্রহ নিজের কক্ষপথে খুব ধীর গতিতে পরিক্রমন করে । ভেনাস বা শুক্র গ্রহের একদিন পৃথিবীর আট মাসের সমান হয়ে থাকে ।

ভেনাস বা শুক্রে পৃথিবীর থেকে মোটা বায়ুমণ্ডল যেটা অধিকমাত্রায় কার্বন-ডাই-অক্সাইডে ভরপুর । কার্বন ডাই অক্সাইড ওই কার্বন-ডাই-অক্সাইড যেটা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে মাত্র ০.০৪% আর আমরা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর মত বিপদের আশঙ্খায় ভুগছি । আর অন্যদিকে শুক্র গ্রহের Atmosphere-এ এই কার্বন ডাই অক্সাইড ৯৬.৫% এবারে আপনি নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন যে কেন শুক্র আমাদের সৌরমণ্ডলের সবথেকে গরম গ্রহ । আজ থেকে কয়েক কোটি বছর আগে শুক্র আর পৃথিবীতে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা প্রায় সমান ছিল ।

শুক্র গ্রহ

কিন্তু পৃথিবীতে এই কার্বন-ডাই-অক্সাইড অম্ল বৃষ্টির কারণে পুরু পাথরের আকারে জমে যায় যার ফলে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে এই কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কম হয়ে যায় কিন্তু শুক্র গ্রহের বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাএা একই রকম থেকে যায় । আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার আরব বছর আগে শুক্র আর পৃথিবী দুটি গ্রহের জন্ম প্রায় একই রকমভাবে হয়েছিল । এই দুটি গ্রহের আকার তথা Density প্রায় সমান । আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা মনে করতেন যে শুক্র গ্রহের পুরু বায়ুমন্ডলের নিচে আমাদের পৃথিবীর মতোই গাছপালা জঙ্গল আর ডাইনোসর বসবাস করতে পারে ।

কিন্তু আসল খেলা ১৯৫০-এর দশক থেকে শুরু হয় ।যখন স্পেস যাত্রা শুরু হয় । যখন আমেরিকা চাঁদে যাওয়ার পদক্ষেপ নিচ্ছিলেন তখন রাশিয়া আমাদের প্রতিবেশী গ্রহ সম্পর্কে জানতে লেগে পড়ে । রাশিয়া ১৯৬১ থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যে একের পর এক ১৬ টি Vanera Space Probes ভেনাস এর দিকে লঞ্চ করেন । যার মধ্যে কেবলমাত্র ছটি Space Probes ভেনাসের সারফেসে ল্যান্ড করতে পারে । শুক্র গ্রহের সারফেসে land করা খুবই কঠিন ছিল । অধিকতর স্পেস probes শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ সাথে সাথেই হারিয়ে যায় কিন্তু ১৯৭৫ সালে রাশিয়ার কঠিন পরিশ্রমে Vanera নাইন স্পেস Probes শুক্র গ্রহের সারফেসে ল্যান্ড করতে সক্ষম হয় । আর ফাইনালি আমরা শুক্র গ্রহের উপরি পৃষ্ঠের Images দেখতে পাই । কিন্তু এখানে যা দেখা গেল সেটা এমন একদমই ছিল না যেটা এই শুক্র গ্রহের সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন । এগুলি ওইসব images যেগুলি ‍sprobes এর মাধ্যমে দেখা গিয়েছিল ।

শুক্র গ্রহ

এটাই ছিল প্রথম মুহুর্ত যখন মানুষ কোন অন্য গ্রহের Surface কে দেখছিল আর সেটা একদমই আমাদের পৃথিবীর মত ছিল না । এর ঠিক সাত বছর পর Venera 13 আর Venera 14 শুক্র গ্রহের সারফেসের প্রথম Colorful ইমাজেস আমাদেরকে প্রদান করে । যেখানে কিছু এমন দেখা গিয়েছিল যে এই জায়গা কোনো নরকের থেকে কম নয় । এখানে পাঠানো কোন স্পেস Probes এর Volcanic সারফেস আর Huge Atmosphere এর প্রেসারে কয়েক ঘন্টার থেকে বেশি টিকতে পারেনি ।

বৈজ্ঞানিকেরা এটি মনে করেন যে আজ থেকে কয়েক কোটি বছর আগে শুক্র গ্রহের surface -ও সমুদ্রের অস্তিত্ব ছিল কিন্তু সেই সমুদ্র বা তার জল কোথায় হারিয়ে গেল । এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য ১৯৮৯ সালে নাসা the magellan space probe লঞ্চ করে । যেটি শুক্র গ্রহের radder mapper নামেও পরিচিত । এই স্পেস ক্রাফট রেডার টেকনোলজির মাধ্যমে শুক্র গ্রহের সারফেসের mapping করে ।

আর আমরা শুক্র গ্রহের এই না দেখা রূপ দেখতে পাই । যেটা শুক্র গ্রহের ঘন মেঘের নীচে লুকিয়ে ছিল । আর এখানে দূর দূর পর্যন্ত কোথাও জলের নামমাত্র ছিলনা । এখানে চারিদিকে শুধু গরম লাভার নদী ছড়িয়ে আছে । উপরে তপ্ত হওয়া লাল আকাশ আর গরম pressure cooker এর সমান atmospheric pressure এখানে মানুষের বেঁচে থাকা অসম্ভব । শুক্র গ্রহে এটার উদাহরণ দেয় যখন গ্রীন হাউজ মাত্রার থেকে অধিক হয়ে যায় তখন কী হতে পারে । গ্রীন হাউস ইফেক্টের কারণে সূর্যের গরম শুক্র গ্রহের ভেতরে তো আসতে পারে কিন্তু সেখান থেকে আর বাইরে বের হতে পারে না । শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলের প্রেসার এতটাই বেশি যে এখানে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের আকারে নয় বরং একটি সুপার critical fluid রূপে আছে ।

যদি কোন স্পেশাল স্যুটের মাধ্যমে মানুষ ভেনাসের সারফেসেও পৌঁছে যায় তা হলেও মানুষ এখানে বেঁচে থাকতে পারবে না । আর এর কারণ এখানে চলা ভয়ংকর আন্ধি যেটা ৩৭০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হয় ।

venus

কিন্তু আপনি এটা জেনে আশ্চর্য হবেন যে আমাদের সৌরমণ্ডলের সবথেকে গরম প্লানেটসও বরফের অস্তিত্ব আছে কিন্তু ঐ রূপে নয় যেমন আমরা জানি । যখন রেডার টেকনোলজির মাধ্যমে ভেনাস গ্রহের mapping করা হচ্ছিল তখন এর mountains এর উপর খুব সাদা রঙের কিছু  জিনিসকেও দেখতে পাওয়া যায় । যদি আপনি শুক্র গ্রহের সারফেস দেখেন তাহলে এইসব mountains এর শিখড় খুবই উজ্জ্বল দেখতে পাবেন । আর এটি উজ্জ্বল কারণ সূর্যের আলোকে রিফ্লেক্ট করছে । বৈজ্ঞানিকেরা মনে করেন এই উজ্জ্বল জিনিসটা হল শুক্র গ্রহে থাকা বরফ । যেগুলি ধাতুর আকারে এইসব পর্বতের উপর জমে আছে কিন্ত এটি একটি ধাঁধাঁ বা কল্পনার মত ।

যাকে Essa মানে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির এই প্রোগ্রাম ভেনাস এক্সপ্রেস এর দ্বারা সমাধান করার চেষ্টা করছে । আমরা আজও এটা দেখতে পারি যে সোলার উইন্ডসের জন্য শুক্র গ্রহের সারফেস থেকে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনের রূপে জল বাইরে স্পেসে চলে যাচ্ছে । যেটা আমাদেরকে ঐদিকে সংকেত করে যে হয়তো কখনো এখানে সমুদ্রের অস্তিত্ব ছিল । কিন্তু দুঃখের কথা এটাই যে আমরা আজও এটা জানি না যে শুক্র গ্রহের এমন অবস্থা কেমন করে হলো । কোন ঘটনা শুক্র গ্রহকে এই অবস্থাতে রূপান্তরিত করেছে । কিছু বৈজ্ঞানিক মনে করেন যে কোনো এক সময় শুক্র গ্রহের নিজের চাঁদ ছিল । যেটা কোন কারনে শুক্র গ্রহের সাথে ধাক্কা লেগে যায় আর এই impact এর জন্যই ভেনাসের ঘূর্ণন উল্টোদিকে শুরু হয়ে যায় আর খুবই ধীরে হয়ে যায় । যার কারণে শুক্র গ্রহ নিজের ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ফিল্ড হারিয়ে ফেলে আর সূর্য থেকে আসা solarwinds এর আগের কাজ করে ।

শুক্র গ্রহে বরফ

শুক্র গ্রহে বিদ্যমান জল স্পেসে পাঠিয়ে দেয় । কিন্তু আমরা exactly এটা জানি না যে আসলে এমনটা কেন হয়েছে । কিন্তু একটি কথা যেটা শুক্র গ্রহ আমাদেরকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয় যে ভেনাসের বর্তমান হয়তো আমাদের পৃথিবীর ফিউচারকে দেখিয়ে দেয় । যেভাবে আমরা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মত ঘাতক গ্যাসকে উৎপাদন করছি যার ফলে এটা একদমই সম্ভব যে একদিন পৃথিবীরও এমনই অবস্থা হবে । যদি আপনি এখনও এটা ভাবেন যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে আমাদের পৃথিবীর কোন বিপদ নেই তাহলে আপনি শুক্র গ্রহ সম্পর্কে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস কতটা ভয়ংকর সেই সম্পর্কে ইন্টারনেটে একটু ভালোভাবে রিচার্জ করলেই জানতে পারবেন যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড কতটা ঘাতক গ্যাস ।

রহস্যময় পৃথিবীর রহস্য জানতে আমাদের সাথে জুড়ে থাকুন ।

Leave a Comment