ডিজাইনার হিসাবে অর্থ উপার্জন-2

ডিজাইনার হিসাবে অর্থ উপার্জন দ্বিতীয় অংশ

ল্যান্ডিং পেজ ডিজাইন

একটি ল্যান্ডিং পেজ ডিজাইন সংক্ষিপ্ত, স্পষ্ট এবং প্রভাবশালী ওয়েব পৃষ্ঠা তৈরি করার প্রক্রিয়া। এটি মূলত ইউজারদের কোন একটি নির্দিষ্ট ক্রিয়াকলাপে উৎসাহিত করতে এবং ইনফরমেশন বিন্যাস করতে ব্যবহৃত হয়। ল্যান্ডিং পেজের উদ্দেশ্য হল আকর্ষণীয় ডিজাইন, সংক্ষিপ্ত লেখা, প্রভাবশালী ছবি ব্যবহার এবং কল টু অ্যাকশন বাটনের মাধ্যমে ইউজারদের একটি নির্দিষ্ট ক্রিয়া করতে প্রায়শই উৎসাহিত করা।

গুগল, বিং, ইউটিউব এবং ফেসবুক বা অন্য কোন বিজ্ঞাপন থেকে ভিজিটরদের লিড কালেক্ট করার জন্য যে পেইজ তৈরি করা হয় বা যে পেইজে ‘অ্যাড’ এর মাধ্যমে ভিজিটরদের ল্যান্ড করানো হয় তাকেই ল্যান্ডিং পেইজ বলে। অনেকে এই ল্যান্ডিং পেইজকে বিভিন্ন নামে চিনে থাকেন যেমন- লিড ক্যাপচার পেইজ, সিঙ্গেল প্রোপার্টি পেইজ, স্ট্যাটিং পেইজ এবং ডেসটিনেশন পেইজ।

ল্যান্ডিং পেজ বানানো হয় মার্কেটিং অথবা অ্যাডভার্টাইজিং ক্যাম্পেইন পরিচালনার উদ্দেশ্যে। বিজ্ঞাপনে ক্লিক করার পর ভিজিটর প্রথম এই পেজ এ ল্যান্ডিং করার মাধ্যমে ওয়েবসাইট ব্রাউজিং করা শুরু করে বলে একে ল্যান্ডিং পেজ বলে।

ল্যান্ডিং পেইজ অনেকটা ওয়েব পেইজের মত। এটি ওয়েব সাইটেরই একটি অংশ। তবে ওয়েব পেইজ এবং ল্যান্ডিং পেইজের মধ্যে তফাৎ রয়েছে। সেটি নিয়ে আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করেছি।  ল্যান্ডিং পেইজ ডিজাইন করা হয় নির্দিষ্ট কোন টপিক কে টার্গেট করে। এটি ডিজাইনের ও বিভিন্ন রকম উদ্দেশ্য রয়েছে।

একজন ল্যান্ডিং পেজ ডিজাইনার হিসেবে অর্থ উপার্জনের বড় একটা সুযোগ থাকে যা উপড়ের বিষয় থেকেই বোঝা যায়।  

ওয়েবসাইট রক্ষণাবেক্ষণ সেবা

ওয়েবসাইট রক্ষণাবেক্ষণ সেবা প্রদান করে ইনকাম করা যায়। এই সেবাটি সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশাসন, ব্যাকআপ এবং রিস্টোরেশন, ম্যালওয়্যার স্ক্যানিং এবং সর্বত্রিক নিরাপত্তা মূল্যায়ন সহ বিভিন্ন কাজে সম্পর্কিত হতে পারে।

এই সেবাটি সাইট মালিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যারা তাদের ওয়েবসাইটের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে চিন্তিত থাকেন। রক্ষণাবেক্ষণ সেবার মাধ্যমে তারা হ্যাকিং, ডেটা লিকেজ, ম্যালওয়্যার এবং অন্যান্য সাইবার আপত্তিগুলি থেকে তাদের ওয়েবসাইটকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন। অন্যদিকে, ওয়েবসাইট রক্ষণাবেক্ষণ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের কাছ থেকে পেমেন্ট গ্রহণ করে আয় করেন।

এই সেবা দ্বারা ওয়েবসাইট মালিকগণ তাদের ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা সংরক্ষণ ও সুরক্ষার জন্য করেন। সাথে সাথে, কোম্পানিগণ প্রতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটগুলি অর্থ পেয়ে থাকার জন্য পারফরম্যান্স মনিটরিং, ডাটা অ্যানালাইসিস, বাগ সংশোধন ও সহজলভ্যতা বৃদ্ধির সেবা ইত্যাদি প্রদান করে ইনকাম করতে পারেন।

ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা ডিজাইন (ইউএক্স ডিজাইন)

UX এর পূর্ণরুপ হল ইউজার এক্সপেরিয়েন্স। যেকোনো প্রোডাক্ট ডিজাইনের ক্ষেত্রে বিবেচনা করার ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয় UX ডিজাইনকে। এই শব্দটি সর্ব প্রথম হিসেবে বিবেচনা করেন ডন নরম্যান। মূলত এটি হচ্ছে এমন একটি ক্ষেত্র যে ক্ষেত্রে কোন বিষয় কিংবা অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তা কখনো একটি ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রেই হোক, একটি সুপার-সপের ক্ষেত্রে হোক কিংবা কোন কফি শপের ডিজাইনের  ক্ষেত্রেই হোক না কেন।

মূলত এই পুরো প্রক্রিয়াটি একটি ব্যবসা এবং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে পণ্য পরিসেবার পুরো প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচনার কথা গণ্য করা হয়। তাই একজন UX ডিজাইনার একজন ব্যবহারকারীর প্রয়োজনীয়তার কথা অনুভব করে তাদের কাঙ্ক্ষিত কাজগুলো সহজবোধ্য করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে।

এই সেক্টরে একজন দক্ষ ডিজাইনার হিসেবে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আপনি বাইরের দেশেও নিজের কাজের পরিধি বিস্তৃত করতে পারবেন। সময়ের সাথে ডিজিটাল মাধ্যমের উপর গ্রাহকদের নির্ভরতা বেড়েছে।

এখন আর কোন গ্রাহক কোন দোকানে গিয়ে কেনাকাটা করে না। বরং ঘরে বসেই নিজের পছন্দের জিনিসটি কেনাকাটা করছে। ফলে ব্যবসা খাতে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। আর এই জন্য  ডিজিটাল মাধ্যমের উপর মানুষের  এই নির্ভরতার জায়গা থেকে এই সেক্টরে মানুষ তার ক্যারিয়ার গঠনের চাহিদা বেড়েছে। 

সম্পূর্ণরূপে একজন দক্ষ ডিজাইনার হিসেবে পুরো  ডিজিটাল মিডিয়া বর্তমানে বেশ একজন দক্ষ UX ডিজাইনারের কদর বেড়েছে। দিনে দিনে এই খাত আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে। তাই ক্রমবর্ধমান চাহিদা-সম্পন্ন এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গঠন করলে আপনাকে চাকরি খুঁজতে হবে না বরং চাকরি আপনাকে খুঁজে নিবে। তাই প্রতিযোগিতার এই যুগে চাহিদা-সম্পন্ন কোন বিষয়ে ক্যারিয়ার গঠন করতে চাইলে  একজন দক্ষ UX ডিজাইনার হিসেবে ক্যারিয়ার গঠনর বিকল্প নেই।   

ওয়েবসাইটের জন্য সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান (SEO)

Seo এর পূর্ণরুপ হলো = সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন । এসইও বুঝতে হলে আগে বুঝতে হবে সার্চ ইঞ্জিন কি ? সার্চ ইঞ্জিন হলো, যেখানে  আমরা বিভিন্ন কিছু সার্চ করি । যেমন গুগল , বিংগ, ডাগডাগগো, বাইদু, ইয়াহু ইত্যাদি ।

একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা বুঝতে সহজ হবে । ধরুন আপনার একটি মধু বিক্রির ওয়েবসাইট আছে । এখন আপনি চাচ্ছেন কেউ যদি মধু লিখে গুগলে সার্চ করে তবে আপনার সাইটটি যেন আগে দেখায় । কারন আমরা যখন গুগলে কোন কিছু সার্চ করি ।তখন গুগলের প্রথম পাতায় যে সাইটগুলার লিংক পাই সেগুলোতেই ক্লিক করি ।

এখন প্রশ্ন হলো গুগল কেন আপনার সাইটকে প্রথম পজিশনে রাখবে ? অনলাইনে তো মধু বিক্রির হাজার হাজার ওয়েব সাইট আছে । সেগুলোকে কেন প্রথমে না রেখে আপনার ওয়েবসাইটকে প্রথম পজিশন দেবে ? এর প্রধান কারন হলো এসইও ( Seo )  ।

আপনার ওয়েব সাইটে মধু নিয়ে নিয়মিত আলাপ আলোচনা চলে । মোটকথা আপনি গুগলকে ভালোভাবে অপটিমাইজ করেছেন মধু কিওয়ার্ড এর জন্য । অনলাইনে হাজার হাজার মধু বিক্রির ওয়বে সাইট থাকলেও তারা ভালোভাবে সার্চ ইঞ্জিন কে বোঝাতে পারে না। যে তারা কোন টপিক নিয়ে কাজ করছে । যে যতটুকু বোঝাতে পরি বিষয়টি সে ততো ভালে পজিশনে থাকে ।

তাই এসইও শিখে আপনি বিভিন্নভাবে টাকা ইনকাম করতে পারবেন ঘরে বসে থেকেই ।

  • নিজের ব্লগে এসইও করে ভিজিটর এনে ইনকাম করতে পারেন ।
  • একটি এফিলিয়েট সাইট বানিয়ে সেটা এসইও করে বিপুল পরিমান টাকা ইনকাম করতে পারেন।
  • দেশ বিদেশের বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে এসইও সার্ভিস সেল করে ইনকাম করতে পারেন একদম ঘরে বসেই ।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস

যখন কোন একটি ওয়েবসাইট ডিজাইন করার পরে উক্ত ডিজাইন অনুযায়ী তৈরি করা হয়। এবং ওয়েবসাইট তৈরি করার পরে যখন সেই ওয়েবসাইট কে আরো উন্নীতকরণ করার জন্য কাজ করা হয়। মূলত ওয়েবসাইটের ডেভেলপ করার জন্য কাজ করা হয়। তখন সেই কাজ কে বলা হয়ে থাকে, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট।

আপনি যদি এই সেক্টর থেকে টাকা আয় করতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনাকে দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তি হতে হবে। যদি আপনার ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে পর্যাপ্ত ধারণা থাকে, এবং আপনার মধ্যে যদি সৃজনশীলতা থাকে। তবে আপনি এই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর দক্ষতার বিনিময়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন। আর ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেস গুলো তে একেকটি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর কাজ অনেক হাই রেটে করা হয়ে থাকে।

আপনি আপনার এই দক্ষতা কে ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে কাজে লাগানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের দেশীয় লোকাল জব করতে পারবেন। কারণ একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার পর, সেই ওয়েবসাইটের ডেভলপ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। আর আপনি যদি এই সুযোগটা কে কাজে লাগিয়ে আপনার ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেন। তবে এই কাজে আপনার ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা থাকবে।

ওয়েব ডিজাইন পোর্টফোলিও

পোর্টফোলিও বলতে সাধারন অর্থে যা বুঝায় তা হলো কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্টোর যেখানে শিল্পকর্ম বা কাজের নমুনা সংক্ষন করা হয়।  আর যদি সহজ ভাষায় একজন ফ্রিল্যান্সারের দিক দিয়ে বলি তাহলে ।একজন ফ্রিল্যান্সার যে বিষয় নিয়ে কাজ করে সে বিষয়ের কিছু কাজের নমুনা যে অনলাইন প্লাটফর্মে সংরক্ষন করে তাকে পোর্টফোলিও বলে।

 যারা ফ্রিল্যান্সিং পেশায় যুক্ত তাদের অনেক প্রয়োজনীয় একটি জিনিস হলো একটি আদর্শ পোর্টফোলিও।

একজন ছাত্র যখন কোন চাকুরিতে জয়েন করে তখন তাকে তার ছাত্রজীবনে অর্জিত সকল সার্টিফিকেট যেমন দেখাতে হয়। সে কী পাশ শুধু মুখে বল্লেই কিন্তু হয় না। তেমনি একজন ‍ফ্রিল্যান্সার শুধু মুখে বল্লে হয় না যে,আমি এইটা পারি,ওইটা পারি সে যে আসলেই পারে তার জন্য ডকুমন্টেস দরকার হয় অর্থাৎ তার কাজের নমুনার দরকার হয়। একজন বায়ার কাজ দেওয়ার পূর্বে অব্যশই দেখবে সে কাকে কাজ দিচ্ছে সে কাজ পাওয়ার যোগ্য কী না? তাই তখন বায়ারকে নিজের দক্ষতার প্রমান হিসেবে কিছু কাজের নমুনা দেখাতে হয় যেটাকে পোর্টফোলিও বলে। 

পোর্টফোলিওতে যদি কাজের কোয়ালিটি,মান সব কিছু ঠিক থাকে তখন বায়ার আসস্ত হয়ে কাজ দিয়ে থাকে। আবার একটি ভাল মানের পোর্টফোলিওর জন্য এমনও হয় যে, বায়ার পোর্টফোলিও দেখে নিজে থেকেই কাজ করিয়ে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। ভাল মানের পোর্টফোলিও হলে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। নিজের পোর্টফোলিও থাকলে নিজের কাজের সম্পর্কে অনেক ধারনা আসে,যেমন আমি কী পারি? কী কী পারি না? আমার আরও কী স্কিল ডেভোলোপ করা দরকার ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে একটি প্রোফেশনাল পোর্টফোলিও থাকলে প্যাসিভ ইনকামেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়। 

তাই পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারলে, এইখান থেকেই ভালো উপার্জন করা সম্ভব।

এতক্ষণে আপনি অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন ডিজাইনার হিসাবে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। তাই,

আপনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে আপনার জন্য উপযোগী সেক্টরটি বেছে নিন। নিজেকে দক্ষ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকুন।

আরো জানুনঃ

Leave a Comment