ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার কেমন ?

ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে সবার কাছে পরিচিত একটা কথা। এর কাজটাও এখন অনেকেই বোঝেন। তবে অনেকেই শুধু জানে যে, ঘরে বসে হাজার হাজার ডলার আয় করা যায়। শুধু এইটুকু জানলেই হবে না। যে কোন পেষার লোকের ভালো কিছু করতে হলে তার কাজের উপর দক্ষতা অর্জন করতে হয়। কোনো পেষার লোককেই দেখা যাবে না দক্ষতা ছাড়া ভালো ভাবে কাজ করতে। তাই ফ্রিল্যান্সিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চাইলেও নিজেকে আগে দক্ষ করতে হবে।

ফ্রিল্যান্সার হতে নিজেকে দক্ষ করার বিকল্প নেই। তা যে কোনো একটা বিষয়ের উপর হতে পারে। তা হোক ওয়েব ডেভেলপামেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ইমেইল মার্কেটিং, ইউ আই ডিজাইন, এসইও, অ্যাপ ডেভেলপামেন্ট, কনটেন্ট রাইটিং ইত্যাদি অনেক অনেক বিষয় আছে যেগুলো নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা যায়। তাছাড়া অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর কাজ করতে চাইলেও এই বিষয়ের উপর নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে।

দক্ষতা অর্জন করার জন্য বিভিন্ন উপায় বা মাধ্যম আছে। আগে দেখতে হবে নিজের ভেতর কোন বিষয়টির কিছু ধারণা রয়েছে, তাহলে সেই বিষয়টির উপর নিজেকে আরো দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। আর যদি কোনো কিছুর উপর ধারণা না থাকে তাহলে অবশ্যই আগে একটা বিষয় এর উপর দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আর দক্ষতা অর্জন করতে কত সময় লাগবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে নিজের উপড়।

দিন দিন ফ্রিল্যান্সিং ব্যাপক পরিচিতি পাবার আসল কারন, দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে আয় করার যোগ্যতা। তাড়াছা নিজের নির্ধারণ করা সময়েই কাজ করতে পারছেন। বাংলাদেশে এমন অনেক ফ্রিল্যান্সার আছে যাদের আয় শুনলে অবাক না হয়ে থাকা যাবে না। তাদের এই সফলতা এতো সহজে আসে নি, বহু সাধনার পর তারা তাদের সফলতার লক্ষ্যে আগাতে পেরেছে।

ফ্রিল্যান্সিং কি?

ফ্রিল্যান্সিং হল নিয়মিত কোন সংস্থার সাথে নিয়োগ হয়ে একটি ব্যক্তি স্বনির্ভর হতে চাইলে তার নিজস্ব সময় ও কাজের মূল্য নির্ধারণ করে তার কাজ করা হয় যা অনলাইন বা অফলাইন হতে পারে। এই কাজ একটি কমিউনিটি বা একটি সংস্থার সাথে যুক্ত থাকার প্রয়োজন নেই। ফ্রিল্যান্সার নিজেকে বিক্রেতা হিসেবে বিক্রি করে একটি সেবা বা পণ্য উত্পাদন করতে পারেন এবং ক্রেতা কর্তৃক পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সিং একটি সম্পূর্ণ অনলাইন কাজ পদ্ধতি যা কর্মীদের দ্বারা সম্পাদিত হয়। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করা শুরু করতে হলে একটি প্রফাইল তৈরি করতে হবে এবং কর্তৃক নিয়োগের জন্য প্রস্তাব লিখতে হবে। এই কাজে বিভিন্ন স্কিল যেমন ওয়েব ডিজাইন, ডেটা এন্ট্রি, মার্কেটিং এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ইত্যাদির যে কোনো একটি বিষয়ের উপর কাজ করতে হয়।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে আয় করার মাধ্যমকেই সাধারণত ফ্রিল্যান্সিং করা বোঝানো হয়। এটা চাকরির মতো বলা যাবে না, কারণ নিজের স্বাধীনতা থাকে এই পেশাতে। নিজের সুবিধা মতো কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায় এই পেশাতে। তাই ফ্রিল্যান্সিংকে মুক্ত পেশাও বলা হয়ে থাকে।

অন্যান্য চাকরি গুলাতে সাধারণত দেখা যায় যে, একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে দেওয়া থাকে, আর দেই ধরা বাধা সময় অবশ্যই মেনে চলতে হয়। এই ধরা বাধা সময় মেনে না চললে চাকরি হারানোরও ঝুকি থেকে যায়। অপরদিকে দেখা যায়, ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে এমন ধরা বাধা সময় না থাকায়, নিজের মতো করে কাজ করা সম্ভব হয়।

ফ্রিল্যান্সিং করে এমন অনেকে আছে যাদের আয় শুনলে অবাক হতে হবেই। আমাদের দেশের চাকরিগুলোতে যেমন বেতন প্রদান করা হয়, তার থেকে কয়েকগুন বেশি অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হয় এই মুক্ত পেশাতে।

যে কাজ সম্পর্কে ধারণা আছে, সেই কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন লোকের বা কোম্পানির কাজ করে অর্থ উপার্জন করার মাধ্যমটি ফ্রিল্যান্সিং হিসেবে পরিচিত। তার মানে বিভিন্ন কোম্পানি বা ব্যাক্তি তাদের কাজ দিবে আর নিজের জানা দক্ষতা অনুযায়ী সেই কাজ করে দেওয়ার এই মাধ্যম ফ্রিল্যান্সিং। নিজের ভেতর এমন কিছু দক্ষতা তাই থাকা দরকার, যার উপর নির্ভর করে বায়ার কাজ দিতে পারবে।

এভাবেও ফ্রিল্যান্সিংকে বলা যায়, নিজের দক্ষতা মতো অন্যের কাজ করে দেওয়ার মাধ্যম হল ফ্রিল্যান্সিং। এই সেক্টরের বিশেষ সুবিধা হল, বিভিন্ন বিষয়ের উপর কাজ করার সুযোগ থাকে। কন্টেন্ট রাইটিং, ডিজাইনিং, ডিজিটাল সার্ভিস, সেলিং সার্ভিস ইত্যাদি। কাজগুলা ঘন্টায়, ডেইলি, সাপ্তাহিক, মাসিক যে কোনো চুক্তিতে করা যায়।

ফ্রিল্যান্সিং করে এখন থেকে অর্থ উপার্জন করতে চাইলে, সবার আগে দেখতে হবে নিজের ভেতর কি বিশেষ ট্যালেন্ট এবং দক্ষতা আছ, যাকে কাজে লাগিয়ে এই সেক্টরে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে। আর দক্ষতা কম থাকলে সেই দক্ষতাকে আরো বৃদ্ধি করতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিং এর গুরুত্ব

ফ্রিল্যান্সিং হলো একটি কাজ করার পদ্ধতি যেখানে কর্মীরা স্বতন্ত্রভাবে নিজেদের কাজ করে আয় উপার্জন করে। এটি ব্যক্তির স্বাধীনতা বাড়িয়ে দেয় এবং কাজের মান ও সুবিধার জন্য পূর্ণসম্পন্ন করে তোলে।

ফ্রিল্যান্সিং এর গুরুত্ব একটি দেশ বা অর্থনৈতিক পরিবেশে অনেক উচ্চ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন কর্মী একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে বেকার হলে সে তার দেশ ছাড়া কাজ করে আয় উপার্জন করতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা ও পেশাগত সুযোগ থেকে যে কেউ ফ্রিল্যান্সিং করে আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে।

ফ্রিল্যান্সিং এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর মাধ্যমে আর্থিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন হওয়া। ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে ব্যবসাদের খরচ কমানো যায় এবং কাজের মান উন্নয়ন করা যায়।

ফ্রিল্যান্সিং এর গুরুত্বপূর্ণ উপকার নিম্নরূপঃ

  • স্বাধীনতা এবং নির্ভরশীলতা: ফ্রিল্যান্সিং করে আপনি স্বাধীনতা এবং নির্ভরশীলতা অর্জন করতে পারেন। আপনি আপনার নিজের সময়সূচী তৈরি করে নিজের পছন্দমতো কাজ করতে পারেন।
  • সময় এবং খরচ সংকট কম: ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে আপনি কাজ করার জন্য একটি অফিসে যেতে হবে না এবং প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারবেন। এছাড়াও আপনি কোন মতামত ছাড়াই নির্দিষ্ট খরচে কাজ করতে পারবেন।
  • নিজস্ব সময় পরিচালনার সুযোগ: ফ্রিল্যান্সিং করে আপনি নিজের কাজের সময় এবং সুযোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এটি কাজের সাথে আপনার ব্যক্তিগত জীবনও সম্বলিত রাখতে সাহায্য করে।
  • বেশি আয়: ফ্রিল্যান্সিং সাধারণত আপনি আপনার নিজস্ব সময় পরিচালনায় এবং আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে আপনার নিজের মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন। এটি আপনাকে বেশি আয় করতে সাহায্য করে।
  • নিরাপত্তা: ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে ব্যক্তিরা নিজেদের নিরাপত্তার কাজ করতে পারেন এবং নিজেদের জন্য নিরাপদ অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সিং এর অসুবিধা কি?

ফ্রিল্যান্সিং করা একটি উচ্চস্বলতা এবং স্বাধীনতা প্রদান করতে পারে তবে এটি কিছু অসুবিধাও উপস্থাপিত করতে পারে, যেগুলো নিম্নরূপঃ

  • আসল কাজের পরিমান: ফ্রিল্যান্সিং করতে প্রথমে একটি ভাল কাজ পাওয়া প্রয়োজন। অনেক সময় ব্যক্তি ভালো কাজ পেতে না পেলে অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীন হয়ে যান।
  • পরিবেশের অস্থিরতা: ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে কাজ করা স্বাভাবিক যে আমাদের অফিসের মতো পরিবেশ নেই। তাই কাজে দ্রুত প্রগতি না পেতে পারেন কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং করতে অনুকূল পরিবেশ নির্বাচন করলে এই সমস্যাটি মোটামুটি দূর করা সম্ভব।
  • অস্বস্তি এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজার: ফ্রিল্যান্সিং একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার যেখানে ব্যক্তিরা নিজের দক্ষতা ও দক্ষতার বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে না।
  • অনিয়মিত আয়: ফ্রিল্যান্সিং করে ব্যক্তি অনিয়মিত আয় পাবেন। এটি ব্যক্তির জন্য আর্থিক পরিস্থিতি বিশেষভাবে চালক হতে পারে।
  • কাজের দরদাম: ফ্রিল্যান্সিং করে ব্যক্তি নিজের কাজের মূল্যমান নির্ধারণ করে নিতে পারেন না। কিছু ক্লায়েন্টদের কাছে নিয়মিত পরিবর্তন হওয়া বা কাজ আনসুট হওয়া সম্ভব যা ব্যক্তির জন্য কাজ করা কঠিন করে দেয়।
  • আইনজীবী সমস্যা: ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে আইনজীবী সমস্যা হতে পারে। ব্যক্তির সাথে কোন ব্যবসাই সম্পর্কিত সমস্যা হলে সেই সমস্যা নিয়ে আইনজীবী কাজ করতে হতে পারে।
  • ক্লায়েন্টের আশানুসারে কাজ করা: কিছু ক্লায়েন্ট ব্যক্তির কাছে বিভিন্ন আশা নিয়ে থাকতে পারে। ব্যক্তির জন্য এটি কাজ করা কঠিন হতে পারে।

পরিশেষে, ফ্রিল্যান্সিং এ ক্যারিয়ার কতটা উজ্জ্বল সেটা প্রশ্ন করার আগে অবশ্যই আপনাকে ভাবতে হবে আপনি কতটা ধৈর্যসহকারে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন। হ্যাঁ, যদি আপনার পর্যাপ্ত ধৈর্য থাকে তাহলে অবশ্যই ফিল্যান্সিং আপনার জন্য উজ্জ্বল একটি ভবিষ্যত অপেক্ষা করতেছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে উত্থান-পতন একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। যদি এই সময় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারেন। তবে অবশ্যই আপনাকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের স্বাগতম। ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে উজ্জ্বল ভবিষ্যত অপেক্ষা করতেছে।

Leave a Comment