ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখার কার্যকরী উপায়

আমাদের মধ্যে অনেকের রয়েছে হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। সঠিক ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহনের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব। হাই ব্লাড প্রেসার কমানোর জন্য এমন সব খাবার গ্রহন করতে হবে, যার মধ্যে থাকবে পর্যাপ্ত পরিমানে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। এর কারন হল খাদ্যের মধ্যে এই সব উপাদান উচ্চ রক্তচাপ কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আজ একটু প্রেসার বেড়েছে মনে হচ্ছে ৷ প্রেসার বলতে বোঝায় রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার। জার্মানিতে উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছেন, এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন কোটির বেশি ৷ অথচ তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকই সে কথা জানেন না । বর্তমানে আমাদের দেশেও এই রোগের সংখ্যা দ্রুত হারে বাড়ছে।

উচ্চরক্ত চাপ সমস্যা হলে কি খাবেন

দই এর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমানে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। তাই কম চর্বিযুক্ত দুধ বা চর্বি বিহিন দুধ বা দুধ জাত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এছাড়া তাজা ফল যেমন কলা, আপেল, এবং বিভিন্ন ধরণের তাজা শাকসবজি যার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম। ম্যাগনেসিয়াম থাকে এমন খাবার গুলি হল গোটা শস্য বা দানা শস্য, সিমের বিচি, ছোলা, ডাল, লাল আটা, সবুজ শাকসবজি, আলু তরমুজ ও টমেটো ইত্যাদি।

তাই যাদের হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের কে এই গুলি অবশ্যই প্রতিদিন খেতে হবে। এই খাবারের মধ্যে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক।

প্রতিদিন ১ থেকে ২ গ্লাস কম চর্বি যুক্ত দুধ বা চর্বি বিহীন দুধ পান করা। প্রতিদিন এক দু টুকরো করে আপেল বা একটি করে কলা বা এক কাপ ফলের রস পান করা। তবে ফলের রস পান করার থেকে আস্ত ফল খাওয়া খুবই ভাল।

উচ্চ রক্তচাপ কখন হয়

উচ্চ রক্তচাপ যাকে আমরা সাধারণত হাই ব্লাড প্রেসার বলে থাকি। এই উচ্চ রক্তচাপ বর্তমানে একটি বিশ্বব্যাপী সংকট। ব্লাড প্রেসার ৯০ থেকে ১৪০ এর উপরে বা এর আশেপাশে গেলে তাকে আমরা হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ বলি। তাই ৯০ থেকে ১৪০ এর উপরে গেলে ব্লাড প্রেসারের সমস্যা হয়

উচ্চ রক্তচাপ এর কারন

হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা জেনেটিক অর্থাৎ বংশগত কারণেও হতে পারে৷ এছাড়া শারীরিক বা মানসিক চাপ, ব্যায়াম বা হাঁটাচলা না করে আরামের জীবন, খাওয়ার সময় বেশি করে কাঁচা লবণ খাওয়া এবং নিয়মিত মদ্য পান করার কারনে উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়।

হটাৎ ব্লাড প্রেসার কমে গেলে কি করবেন

ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ প্রেসার মানব দেহে রক্ত সঞ্চালনে চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করে। প্রতিটি মানব দেহে রক্তচাপের একটি স্বাভাবিক মাত্রা আছে। তার উপর ভিত্তি করেই লো ব্লাড প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ এবং হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ পরিমাপ করা হয়। উচ্চ রক্তচাপের মত নিম্ন রক্তচাপও কিন্তু শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। নিম্ন রক্তচাপের আরেক নাম হাইপোটেনশন। ডাক্তারদের মতে, একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের দেহের রক্তচাপ থাকে সাধারণত ১২০/৮০। এর থেকে যদি অনেকটা কমে বা বেড়ে যায় তাহলেই নিম্ন রক্তচাপ বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হয়।

নিম্ন রক্তচাপ কি

যদি রক্তচাপ ৯০/৬০ বা তার পাশাপাশি থাকে তাহলে তাকে নিম্ন রক্তচাপ বলা হয়। ব্লাড প্রেসার যদি অনেকটা কমে যায় তাহলে কিডনি, মস্তিষ্ক বা হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচল ঠিকমত হয় না ফলে নিম্ন রক্তচাপের সৃষ্টি হয়। আবার কঠোর পরিশ্রম, ভয়, দুশ্চিন্তা ও স্নায়ুর দুর্বলতা থেকে নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে। তাই সবসময় ভয় ও দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।

নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণ

এই রোগ হলে যে লক্ষণ গুলি দেখা যায় তা হল ক্লান্তি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, অবসাদ, চোখের দৃষ্টি আবছা হয়ে যাওয়া, শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা ও বুক ধড়ফড় করা।

নিম্ন রক্তচাপের কারন

নিম্ন রক্তচাপ হওয়ার কারন হল ডায়রিয়া বা অতিরিক্ত বমি হওয়া, অত্যাধিক মাত্রায় ঘাম হওয়া। এছাড়া শরীরের ভেতর থেকে কোনও কারনে রক্তক্ষরণ হওয়া যেমন পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ, রক্তবমি হওয়া, দুর্ঘটনার ফলে আঘাত প্রাপ্ত স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হওয়া এবং অপুষ্টির জন্যও নিম্ন রক্তচাপ জনিত সমস্যা হতে পারে। এদিকে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভের প্রথম ৫ থেকে ৬ মাস হরমনের প্রভাবে নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে।

চিকিৎসা

লো প্রেসার সমস্যা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত থাকেন। তবে এই বিষয়টি নিয়ে বেশি চিন্তিত না থাকাই ভাল। কারন এটি উচ্চ রক্তচাপ সমস্যার চেয়ে অনেক কম ক্ষতিকারক এবং স্বল্পমেয়াদী।

বাড়িতেই কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারেলো লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ সমস্যা হলে। লবন পানি লো প্রেসারের জন্য খুবই ভাল। কারন এর মধ্যে রয়েছে সোডিয়াম। তবে পানির মধ্যে বেশি লবন ভাল নয়। যদি হটাৎ এই রকম সমস্যা হয় তাহলে এক কাপ জলের মধ্যে দুই চা চামচ চিনি ও দুই চা চামচ লবণ মিশিয়ে খেতে পারেন তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের চিনি না নেওয়াই ভাল।

রসুন একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা প্রেসারের ক্ষেত্রে খুব ভাল কাজ করে। রসুন খাওয়া মাত্র পুরো দেহে রক্তের প্রবাহ এতটাই বেড়ে যায় যে আপনার ব্লাড প্রেসার দ্রুত নিয়ন্ত্রনে চলে আসে।  এছাড়া আছে বিট ও কাঁচা বাদাম। বীটের মধ্যে আছে নাইট্রিক অ্যাসিড যা দেহের ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে। কাঁচা বাদামে রয়েছে মন-সেচুরেটেড ফ্যাট যা প্রেসারের ক্ষেত্রে উপকারি। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ টি কাঁচা বাদাম আপনাকে ব্লাড প্রেসার থেকে কয়েকশ মাইল দূরে রাখতে পারে।

এছাড়া কফি বা চকলেট বা কোনও কমল পানীয় পান করতে পারেন। এর মধ্যে ক্যাফেইন থাকে যা দ্রুত রক্তচাপ বাড়াতে পারে। আপনাদের মধ্যে যারা দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যায় ভুগছেন তিনারা সকালে ভারি নাস্তার পরে এক কাপ কফি খেতে পারেন। মধু এই সমস্যার জন্য একটি উপকারি উপাদান। তাই দুধের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

অনেকেই লো প্রেসারের জন্য ঔষধ সেবন করে। লো প্রেসারের ঔষধ নিজে থেকে কিনে এনে সেবন করবেন না। কোন ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিন। হটাৎ করে লো প্রেসার হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।

নিম্ন রক্তচাপ ও হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সময় মত স্বচ্ছ ও পুষ্টিকর খাবার এবং পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করুন

Leave a Comment