চুলের সকল সমস্যার কারন ও চুল ভালো রাখার উপায়

ad for top in BD

স্বাস্থ্যবান সুন্দর চুল শুধু আমাদের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে না, আমাদের ব্যক্তিত্বের ওপরেও প্রভাব ফেলে। সকলের জন্যই চুল এর সৌন্দর্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সবার চুল একরকম নয়, তাই চুলের ধরন অনুযায়ী যত্ন নেবার ধরণও থাকে ভিন্ন। কিন্তু চুলের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সকলকেই এই সহজ ৫ টি নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন। আপনি পাবেন স্বাস্থ্যবান ও ঝলমলে চুল।

সূচিপত্র

চুলের স্বাস্থ্য ভাল রাখার উপায়

চুলের গোঁড়ায় অয়েল ম্যাসেজ করবেন

সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার গরম অয়েল ম্যাসেজ করতে পারেন। চুলের গোঁড়ার ময়েশ্চার বজায় রাখতে এটি খুব কার্যকর। নারকেল তেল, অলেভ অয়েল, আমন্ড অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। আঙুলের ডগা দিয়ে চুলের গোঁড়ায় বেশ ভালো ভাবে ম্যাসেজ করবেন। শ্যাম্পু করার ১ ঘণ্টাখানেক আগে চুলের গোঁড়ায় অয়েল ম্যাসেজ করবেন। আপনি চুলের গোঁড়ায় ম্যাসেজ করার কারণে আরামও পাবেন এবং ঘুমও ভাল হবে। চুল ঘন করতে চাইলে সরিষার তেলও ব্যবহার করতে পারেন।

খাওয়া-দাওয়া

সুন্দর চুলের জন্য প্রথমেই নজর দিবেন খাবারের দিকে। স্বাস্থ্যবান চুলের জন্য সবুজ সবজি ও ফলের রস তো অতি জরুরি এর সাথে দুধ, ফ্রেশ দই, নারকেল, সালাদ ও ফলের ওপর বা ভাতে নারকেল কুরানো খেতে পারেন। রিফাইন্ড, প্রসেসড ও ক্যানড ফুড কম পরিমানে খান।

প্রাকৃতিক পণ্য ব্যাবহার করুণ

চুলের যত্নে কখনোই কড়া কেমিক্যাল ব্যবহার করবেন না। প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের যত্ন করতে পারলে বেশ ভালো হয়। সপ্তাহে অন্তত ৩ বার শ্যাম্পু করার প্রয়োজন হলে ন্যাচারাল ক্লেনজার, কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। নিয়মিত চুলে নারকেল তেল ম্যাসেজ করবেন।

রিলেক্স থাকার চেষ্টা করুণ

চুলের রং ও স্বাস্থ্যের জন্য স্ট্রেস ক্ষতিকারক। তাই স্ট্রেসমুক্ত থাকতে রিলেক্স করার নানা ধরনের টেকনিক অনুসরণ করতে পারেন। যেমন- মেডিটেশন, মিউজিক থেরাপি ট্রাই করতে পারেন।

ভেজা চুলে মাথা আঁচড়াবেন না

চুল ভিজে খাকলে কখনোই আঁচড়াবেন না। চুলের জট ছাড়ানোর জন্য বড় দাঁড়ার ব্রাশ ব্যবহার করবেন। কাঠের চিরুনি ব্যবহার চুলের জন্য স্বাস্থ্যকর। সপ্তাহে অন্তত ১বার ডিপ কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট ট্রাই করুন।

চুল পড়া রোধে করণীয় কিছু চুলের যত্ন

চুল মানুষের সৌন্দর্য বহুগুন বাড়িয়ে দেয়। আমরা চুল পড়তে দেখলেই বা মাথায় টাক পড়ে গেলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। চুলের অতি সাধারণ কিছু যত্ন, দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা, বিশেষ করে ঘুমানোর আগে কিছু কাজ নিয়ম করে করলেই চুল পড়া বন্ধ করা সম্ভব এমনকি আজীবনের জন্যই সম্ভব। তাহলে জেনে নেই চুল পড়া রোধে করণীয় ৫টি সহজ চুলের যত্ন।

চুল পরিষ্কার রাখুন

চুল পরিষ্কার রাখা হলো চুল পড়া রোধে করণীয় প্রথম শর্ত। তাই বাইরে সারাদিন ধুলোময়লার ভেতর থাকার পর বাড়ি ফিরে অবশ্যই চুল পরিষ্কার করা জরুরী। চুল পরিষ্কার করা সকালে বা দিনের বেলা যদি সম্ভব না হয় তাহলে অবশ্যই রাতের গোসলের সময় শ্যাম্পু করবেন। প্রতিদিন চুল পরিষ্কার করার জন্য মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। রাতের গোসলের সময় শ্যাম্পু করলে ঘুমানোর আগে চুল অবশ্যই শুকিয়ে ঘুমাবেন।

চুল আঁচড়ে জট ছাড়িয়ে নিবেন

গোসলে যাওয়ার আগে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিবেন। বাইরে থেকে ফিরে যদি চুল ধোয়া সম্ভব না হয় তাহলে প্রথমে মোটা দাঁতের চিরুনী দিয়ে চুল ভালো করে আঁচড়ে জট ছাড়িয়ে নিবেন। এর পর চিরুনী পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে আবার চুল আঁচড়ান। এতে চুলে আটকে থাকা আলগা ধুলো চিরুনীর সাথে উঠে আসবে। এরপর আবার চিরুনী ধুয়ে নিয়ে একইরূপে চুল আঁচড়ে নিবেন। এতে চুলে জট পড়বে না, চুল ছিঁড়বে না ও চুল ভাঙবে না ফলে চুল পড়ার হার কমে যাবে।

রাতে চুল বেঁধে ঘুমানোর অভ্যাস করবেন

বালিশের সাথে চুলের ঘষা লেগেই রাতের বেলা বেশির ভাগ চুল পড়ে।মানুষের গড়ে প্রতিদিন ১০০টা পর্যন্ত চুল পড়া স্বাভাবিক। তাই বিশেষ করে যাঁদের বড় চুল তারা রাতে চুল বেঁধে ঘুমানোর অভ্যাস করবেন। তাহলেও চুল কম পড়বে। কিন্তু অনেকেই আছেন যাঁরা চুল বেঁধে ঘুমাতে অস্বস্তিবোধ করেন। আবার অনেকের মাইগ্রেনের কারনে চুল বেঁধে ঘুমালে মাথাব্যথা করে। তাই যাঁদের চুল বেঁধে ঘুমাতে সমস্যা হয় তাঁরা ঘুমানোর আগে চুল ভালো করে আঁচড়ে নিবেন যাতে চুলে জট না বাঁধে। কারণ চুলে জট থাকলে চুল পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

চুলের গোড়ায় তেল লাগান

ঝরঝরে চুল পেতে চাইলে আগের দিন রাতে চুলে কুসুম গরম তেল লাগাবেন এবং পরদিন শ্যাম্পু করবেন। অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল যাই আপনি ব্যবহার করেন কুসুম গরম করে চুলের গোড়ায় আলতো হাতে মাসাজ করে লাগাবেন। এতে আপনার ঘুমও ভালো হবে এবং মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন ভালো হওয়ায় চুল শ্যাম্পু করার সময় চুলও কম পড়বে ।

চুলের গোড়া শুকনো রাখুন

অনেকেই অতিরিক্ত ঘামেন তাঁদের চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে চুল আরো বেশি পড়ে। এমনভাবে ঘুমাবেন যাতে ফ্যানের বাতাস মাথায় লাগাতে পারে। রাতে মাথার ত্বক ঘামলে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায় তাই গোলাপজলের ব্যবহার করতে পারেন। গোসলের পর প্রতিদিন ১ মগ পানিতে ৩ চা চামচ গোলাপজল মিশিয়ে চুল ধুয়ে নিবেন। এতে চুলের গোড়া কম ঘামবে।

প্রাকৃতিকভাবে চুল ঝলমলে করার উপায়

সকল নারীরই স্বাস্থ্যউজ্জ্বল ঝলমলে রেশমি চুলের আকাঙ্ক্ষা থাকে। কিন্তু চুল পড়ে যাওয়া, চুলে রুক্ষতা চলে আসা, আগা ফাটার সমস্যা, অতিরিক্ত কেমিক্যাল, আবহাওয়া এবং সঠিক যত্নের অভাবে চুলের অবস্থা দিনকে দিন খারাপ হতে থাকে। যার ফলে বেশীরভাগ নারীর কাছে স্বাস্থ্যউজ্জ্বল ঝলমলে চুল পাওয়ার স্বপ্নটা আসলে স্বপ্নই থেকে যায়। ১ টি মাত্র ডিপ কন্ডিশনিং হেয়ার মাস্ক আপনার চুলের হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে দিতে পারে খুব সহজেই। তাহলে জেনে নিন চুল ঝলমলে করার উপায়।

যা যা লাগবেঃ

  • ১ টি পরপাকা কলা
  • ২ টেবিল চামচ নারকেলের দুধ
  • ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল (অতিরিক্ত শুষ্ক চুল হলে ২ টেবিল চামচ যোগ করুন)
  • ২ টেবিল চামচ মধু

প্রস্তুত প্রনালীঃ

  • প্রথমে কলা ছিলে খণ্ড করে নিন। একটি ব্লেন্ডারে খণ্ডকলা,২ টেবিল চামচ নারকেলের দুধ, ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল, ২ টেবিল চামচ মধু দিয়ে ভালভাবে ব্লেন্ড করে নিন।
  • ৪০-৪৫ সেকেন্ড ব্লেন্ড করুন বা কলা একেবারে মিশে মসৃণ পেস্টের মতো তৈরি করা পর্যন্ত ব্লেন্ড করে নিন। তৈরি হয়ে গেলো আপনার ডিপ কন্ডিশনিং হেয়ার মাস্ক। এই ডিপ কন্ডিশনিং হেয়ার মাস্ক আপনার চুলের হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে দিতে পারে।

ব্যবহারবিধিঃ

  • প্রথমত চুল ভালো করে আঁচড়ে নিন। এরপর এই হেয়ার মাস্ক মিশ্রণটি চুলের গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালো করে লাগিয়ে নিবেন।
  • এরপর চুলের গোঁড়ায় আলতো করে ম্যাসেজ করে নিবেন ৫ মিনিট এবং একটি শাওয়ার ক্যাপ বা প্ল্যাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে চুল ও মাথা ঢেকে রাখুন।
  • তারপর ৩০ মিনিট এভাবে রেখে আপনার সাধারণ শ্যাম্পু দিয়েই চুল ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। এবার পরিবর্তনটি খেয়াল করুন।
  • প্রথম ব্যবহারেই চুলে আমূল পরিবর্তন আপনার নজরে পড়বে। আপনি সপ্তাহে মাত্র ১ বার ব্যবহারেই পেতে পারেন ঝলমলে স্বাস্থ্যউজ্জ্বল চুল। ফিরিয়ে দিতে পারেন চুলের হারানো সৌন্দর্য।

গোসলের আগে ও পরে আপনার চুল পড়ার কারণ

অনেক বেশি চুল পড়ার কারণ লুকিয়ে আছে আপনার গোসল করা বা চুল ধোয়ার পদ্ধতির মাঝে। চুলের পরিপূর্ণ যত্ন করেন, ভালো শ্যাম্পু ব্যবহার করেন, পার্লারে গিয়ে হেয়ার ট্রিটমেন্ট করান, সকল নিয়ম মেনে চলার পরও নিজের অজান্তে কিছু ভুল করেন। কমবেশি আমরা সবাই করে থাকি যে ৯টি ভুল তার সাথে মিলিয়ে নিন।

প্রতিদিন কন্ডিশনার ব্যবহার করা

আমরা প্রায় সবাই মনে করি যে কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুল ভালো থাকে। প্রত্যেকবার শ্যাম্পু করার সময় কন্ডিশনার ব্যবহার করে আরেকটি ভুল করি। কন্ডিশনার ব্যবহারে চুল ভালো থাকে না, বরং কন্ডিশনারে উপস্থিত রাসায়নিকের কারণে চুলে যে সাময়িক একটা নরম ও উজ্জ্বলতা আসে তা মোটেও ভালো নয়। বরং নিয়মিত কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুল পড়ার হার বহুগুন বেড়ে যায়।

প্রতিদিন চুল ধোয়া

রোজ চুল ধোয়ার ভুলটি আমরা প্রায় সবাই করে থাকি। রোজ গোসল করা খুবই জরুরী, কিন্তু রোজ চুল ধোয়া /চুলে পানি লাগানো জরুরী কিছু নয়। আপনি দৈনিক কত সময় বাইরে থাকেন সেটার ওপরে নির্ভর করে আপনার চুল ধোবেন কিনা। চুল নোংরা না হলে প্রতিদিন চুলে পানি লাগানোর কোন দরকার নেই। বিশেষ করে যাদের চুল বেশী লম্বা ও ঘন, তাঁরা তো মোটেও প্রতিদিন চুলে পানি লাগাবেন না। বেশী লম্বা ও ঘন চুল শুকাতে সময় লাগে, বেশি সময় ধরে গোঁড়া ভেজা থাকার জন্য চুল দুর্বল হয়ে যায়। এটি আসলে খুবই ভুল একটি ধারণা।

প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু করা

চুল পরিষ্কার রাখার জন্য অনেকেই রোজ চুলে শ্যাম্পু করেন। এটি আসলে খুবই ভুল একটি ধারণা। চুল পরিষ্কার রাখার জন্য ১দিন পরপর শ্যাম্পু করবেন। তাই রোজ চুলে শ্যাম্পু করা থেকে বিরত থাকুন সেটা যত ভালো ও দামী শ্যাম্পুই হোক না কেন।

হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা

অনেকেই চুল দ্রুত শুকানোর জন্য রোদে বসে চুল শুকানো অথবা হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করার আরেকটি ভুল অভ্যাসে অভ্যস্ত থাকেন। জেনে রাখা ভালো অতিরিক্ত উত্তাপে চুলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। তাই রোদে বসে চুল শুকানো বা হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করে ফ্যানের বাতাসের নিচে চুল শুকানোই উত্তম।

ভেজা চুল আঁচড়ানো

গোসলের পর চুল নরম ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। তাই গোসলের পর পরই ভেজা চুল আঁচড়াতে বসা একেবারেই উচিৎ না। গোসলের পর চুল আঁচড়ালে চুল ভেঙে ও ঝরে যাওয়ার হার বেড়ে যায় অনেক বেশি।

গোসলের আগে চিরুনি দিয়ে চুল না আঁচড়ানো

গোসলের পর পরই ভেজা চুল আঁচড়ানো কাজ না করে গোসলে যাওয়ার আগে বা শ্যাম্পু করার আগে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিবেন। এতে চুলে জট পড়বে না,চুল ছিঁড়বে না ও চুল ভাঙবে না।

ঘষে চুল মোছার অভ্যাস

গোসলের পর চুল নরম ও ভঙ্গুর থাকে তাই তোয়ালে দিয়ে ঘষে ঘষে চুল মোছার অভ্যাস পরিবর্তন করবেন। এই বাজে অভ্যাসের কারণে প্রচুর চুল ঝরে ও চুলের আগা ফেটে যায়।

তোয়ালে পেঁচিয়ে রাখা

গোসলের পর অনেকটা সময় মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে রাখবেন না। এমনিতেই চুল নরম থাকে আবার চুলের ওপরে চাপ পড়ে, চুল ভেঙে যায়,তাই যত দ্রুত সম্ভব বাতাসে চুল শুকিয়ে ফেলবেন। অনেকেই দুপুরে বা রাতে গোসলের পর চুল পুরোপুরি না শুকিয়েই ঘুমিয়ে পড়েন। এর চাইতে খারাপ অভ্যাস আর কিছুই হতে পারে না।এতে চুলের গোঁড়া দ্রুতই দুর্বল হয়ে যায়।

দিনে একাধিকবার চুল ধোয়া

দিনে ২/৩ বার গোসলের অভ্যাস থাকলেও ২/৩ বারই চুল ভেজাবেন না। প্রতিবার চুল ধোয়া /চুলে পানি লাগানো জরুরী কিছু নয়। এই কাজটি মোটেও করবেন না।

খুব সহজেই চুলের আগা ফাটা রোধ করার উপায়

আগা ফাটা সমস্যায় চুলের আগার অংশ লালচে ও রুক্ষ লাগে, ঝাড়ুশলার মতো দেখায়। খুবই যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা হল চুলের আগা ফাটা। শুধু তাই নয় আগা ফাটার কারণে চুল বড় হতে পারে না। এমনকি ঠিক মতো স্টাইলও করা যায় না। তাই চুলের আগা ফাটা রোধ করার উপায় জানা খুব জরুরী।

চুলের যত্নে মধু

মধুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের জন্য যেমন ভালো তেমনই চুলের জন্য কার্যকরী। গোসলের আগে পুরো চুল ভিজিয়ে নিয়ে ভালো করে মধু মাখিয়ে নিবেন। চুলের গোঁড়া থেকে শুরু করে আগা পর্যন্ত ভালো করে মধু মাখাবেন। একটু স্টিকি হলেও অসুবিধা নেই। ৫-১০ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলবেন। এতেই বেশ ভালো ফল পাবেন।

জবা ফুলের ব্যবহার

নারকেল তেল বা অলিভ অয়েলে ২ টি জবা ফুল গরম করে নিবেন। এরপর গরম তেল ছেঁকে ঠাণ্ডা করে বোতলে ভরে রাখবেন। প্রতিবার ব্যবহারের আগে তেল পুনরায় একটু গরম করে নিয়ে চুলের আগা থেকে গোঁড়া পর্যন্ত অনেক ভালো করে তেল মাখিয়ে নিবেন। ২০ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলবেন। সপ্তাহে অন্তত ২ বার ব্যবহার করলেও চুল সংক্রান্ত সকল সমস্যার সমধান পাবেন। জবা ফুলের ব্যবহার চুলের আগা ফাটা সহ আরও চুল সংক্রান্ত সমস্যা। যেমন খুশকি, চুল পড়া ইত্যাদির সমাধান দেয়।

ডিম ও দুধের হেয়ার মাস্কঃ

যা যা লাগবেঃ

  • ডিমের কুসুম ১টি
  • চিনি/ মধু ১ চা চামচ
  • কাচা দুধ ২ টেবিল চামচ

প্রস্তুত প্রণালীঃ

ডিম ও দুধের হেয়ার মাস্ক অনেক বেশি কার্যকরী হেয়ার মাস্ক। ১ টি ডিমের কুসুম, ২ টেবিল চামচ দুধ, ১ চা চামচ চিনি/ মধু ১টি বাটিতে একত্রে ভালো করে মিশিয়ে নিবেন। এই হেয়ার মাস্কটি চুলের আগা থেকে গোঁড়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ চুলে ম্যাসেজ করে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলবেন। সপ্তাহে অন্তত ১ বার এটি ব্যবহারেই বেশ ভালো ফল পাবেন।

চুল পাকা রোধের উপায়

অল্প বয়সে চুল পাকা মোটেও স্বাভাবিক নয়। কিছু দুঃখজনক হলেও অনেকের অকালে চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ভেজাল খাবার, অনিয়মিত জীবনযাপন, দূষণ ও ক্ষতিকর কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনীর ব্যবহার অন্যতম। অকালে চুল পাকা রোধের উপায় সহজ ও আয়ুর্বেদিক।

উপায় ১

যা যা লাগবেঃ

  • মেহেদিপাতা ১০ গ্রাম
  • কেশুতপাতা ১০ গ্রাম
  • আমলকী ২টি
  • জবুফলের মাঝের অংশ ৭-৮টি
  • বিটের রস
  • হরীতকীর ছাল
  • ছাকনি ১টি

প্রস্তুত প্রণালীঃ

একটি দুটি করে চুল সাদা হতে শুরু করলেই উপরের সকল উপকরণ একটি পাত্রে নিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে হেয়ার টনিক তৈরি করুন। এই টনিক নিয়মিত পুরো চুলে লাগান। চুলে ৪০ মিনিট রেখে ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। খুব সহজেই আপনি চুল পাকা প্রতিরোধ করতে পারবেন ।

[বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ চুলের ঘনত্ব ও লম্বা অনুযায়ী পরিমাণ কম বেশি হতে পারে।]

উপায় ২

যা যা লাগবেঃ

  • হরতকীর গুঁড়া ১ চা চামচ
  • মেহেদি পাতা বাটা ২ চা চামচ
  • নারকেল ১/২কাপ

প্রস্তুত প্রণালীঃ

একটি দুটি করে চুল সাদা হতে শুরু করলেই উপরের সকল উপকরণ একটি পাত্রে নিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে একসাথে মেশান। ২ ঘণ্টা পুরো চুলে লাগিয়ে শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিবেন। এতে চুল পাকার সমস্যা দূর হবে দ্রুত।

উপায় ৩

যা যা লাগবেঃ

  • মেহেদি ২ চা চামচ
  • ডিমের কুসুম ১টি
  • টকদই ১/২কাপ

প্রস্তুত প্রণালীঃ

মেহেদি, ডিমের কুসুম ও টকদই একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে চুলে লাগান। সপ্তাহে অন্তত ১ বার এই হেয়ার টনিক ব্যবহার করবেন। চুল পাকা কমে যাবে।

উপায় ৪

যা যা লাগবেঃ

  • আমলকীর রস
  • বাদামের তেল
  • লেবুর রস

প্রস্তুত প্রণালীঃ

একটি দুটি করে চুল সাদা হতে শুরু করলেই আমলকীর রস, বাদামের তেল ও লেবুর রস ১টি বাটিতে একসাথে মিশিয়ে সপ্তাহে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ দিন ব্যবহার করবেন। এই হেয়ার টনিক চুল পাকা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

উপায় ৫

যা যা লাগবেঃ

  • নারকেল তেল ১ কাপ
  • মেথি গুঁড়া ১ টেবিল চামচ
  • আমলকী গুঁড়া ২ টেবিল চামচ

প্রস্তুত প্রণালীঃ

একটি দুটি করে চুল সাদা হতে শুরু করলেই ১ কাপ নারকেল তেল, ২ টেবিল চামচ আমলকী গুঁড়া ১ টেবিল চামচ মেথি গুঁড়া একসাথে মিশিয়ে অল্প আঁচে জ্বাল দিবেন। তেল বাদামি রঙ ধারণ করলে নামিয়ে ঠান্ডা করে ছেঁকে নিবেন। এই তেল সপ্তাহে অন্তত ২ দিন চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে পুরো চুলে লাগিয়ে নিবেন। ২ ঘণ্টা পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলবেন। এই প্যাক ব্যবহারে খুব সহজেই আপনি চুল পাকা রোধ করতে পারবেন।

চুলের ধরন অনুযায়ী নিয়মিত ভালো ব্যান্ডের শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন। চুলের ক্রিম, জেল, স্প্রে, সিরাম, কালার ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষতিকর কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি, তাই এসব ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। নিয়মিত ফলমূল, রঙিন শাকসবজি, পুষ্টিকর খাবার খান ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। এগুলো ভিতর থেকে চুলের সমস্যা দূর করে সেই সাথে চুল হবে সুন্দর ও ঝলমলে।

কোঁকড়া চুল সুন্দরভাবে সাজানোর সহজ উপায়

কোঁকড়া চুল নিয়ে আজকাল আমরা অনেকেই হতাশায় ভুগি। কোঁকড়া চুলকেও সুন্দরভাবে সাজানো সম্ভব এমন চিন্তা করে আশাবাদী হন। কোঁকড়া চুলের মেয়েরা চুলকে সোজা করার জন্য বহু সময় ব্যয় করে। কিন্তু কোঁকড়া চুলকেও খুব সুন্দরভাবে সাজানো যায়। আপনার চুল যদি হয় কোঁকড়া তাহলে নিচের পরামর্শ মেনে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলুন আপনাকে।

কোঁকড়া চুল কোন সমস্যা নয়

কোঁকড়া চুলের মেয়েরা তাদের চুল নিয়ে হতাশায় ভোগে ও বহু সময় ব্যয় করে সেগুলোকে সোজা করার জন্য। কিন্তু হেয়ার স্ট্রেইটনার ব্যবহার করে চুল সোজা করার কাজ নিয়মিত করলে তা চুলের জন্য ক্ষতিকারক। তার বদলে আপনি আপনার কোঁকড়া চুলের সৌন্দর্যকে প্রকাশ হতে দিন এটাই ভালো।

চুলকে বড় হতে দিন

আপনি আপনার কোঁকড়া চুলের সৌন্দর্যকে প্রকাশ করতে চুলকে বড় হতে দিন। সুন্দরভাবে কোঁকড়া চুল সাজানোর জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় চুল বড় করা। চুলকে সহজভাবে বাড়তে দিলে চুলগুলো কোঁকড়া বানানো ও সাজানো সহজ হবে।

প্রয়োজন ভালো একজন হেয়ার স্টাইলিস্ট

কোঁকড়া চুলকে নানাভাবে সাজাতে প্রয়োজন ভালো একজন হেয়ার স্টাইলিস্ট। কারণ কোঁকড়া চুলকে সাজানোর কাজটি সবাই পারেনা। তাই ভালো একজন হেয়ার স্টাইলিস্ট খুঁজে বের করুন। কোঁকড়া চুলের জন্য একটি সুন্দর কাটিং হচ্ছে ‘টুইস্ট কাটিং’। ভালো হেয়ারস্টাইলিস্টের কাছ থেকে এ বিষয়ে জেনে নিতে পারেন।

প্রতিদিন কন্ডিশনার প্রয়োগ করতে পারেন

প্রতিদিন আপনার চুল পরিষ্কার করার জন্য শ্যাম্পু করার প্রয়োজন নেই। একদিন পরপর চুলে শ্যাম্পু করাই ভালো। তবে আপনার চুলে প্রতিদিন কন্ডিশনার প্রয়োগ করতে পারেন। কোঁকড়া চুলের জন্য আলাদা কন্ডিশনার বাজারে পাওয়া যায়। প্রতিদিন চুলে হালকা করে কন্ডিশনার মাখিয়ে ধুয়ে নিবেন। এতে আপনার কোঁকড়া চুল হবে নরম এবং সহজেই সাজানো যাবে।

ব্রাশের বদলে চিরুনি ব্যাবহার করুণ

কোঁকড়া চুল ব্রাশ করার পরিবর্তে চিরুনি করা সহজ। কোঁকড়া চুলে ব্রাশ করার কাজটি সত্যিই ঝামেলাপূর্ণ। তাই ব্রাশ বদলে ব্যবহার করুন একটি চিরুনি। প্রতিদিন অন্তত ১বার করে চুল আচড়ানো দরকার।

এয়ার ড্রাই

কোঁকড়া চুলকে সাজানোর কাজটি একটু সময় সাপেক্ষ। প্রতিদিন সকালে গোসল করে আপনি চুলকে নতুন করে সাজাতে যদি বিরক্ত হন তাহলে রাতেই তা করতে পারেন। সকালে উঠে নানা কসমেটিক্স ব্যবহার করে চুলে সহজেই কার্লি রূপ আনতে পারবেন।

সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলুন

আপনার চুল কোঁকড়ানো মানে স্টাইল করা যাবে না এমন চিন্তা না করে আশাবাদী হন। কোঁকড়ানো চুলেরও আলাদা সৌন্দর্য রয়েছে। এই সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলার চেষ্টা করুন। কারন একে কোঁকড়ানো অবস্থাতেই সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলা সম্ভব।

বেছে নিন আপনার চুলের ধরণ অনুযায়ী শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার

চুল পরিষ্কার করতে আপনারা নিয়মিত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করেন। তবে ব্যক্তি ভেদে চুলের ধরণ একেক রকম হওয়ায় শ্যাম্পু ও কন্ডিশনারের ব্যবহার আলাদা হওয়া দরকার। তাই আপনার জেনে নেওয়া জরুরি যে ব্যক্তি ভেদে চুলের ধরণ অনুযায়ী শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।

কেমন শ্যাম্পু ব্যাবহার করবেন?

  • আপনার চুল তৈলাক্ত হলে প্লেন শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। যেসব শ্যাম্পু দেখতে স্বচ্ছ দেখায় তবে বুঝবেন প্লেন-শ্যাম্পু। তৈলাক্ত চুল শ্যাম্পু করার পর নেতিয়ে থাকে, তাই আপনার চুলে শ্যাম্পু করার সময় শ্যাম্পুর সঙ্গে সামান্য পরিমাণ বেকিং পাউডার মিশিয়ে নিবেন। বেকিং পাউডার মিশিয়ে নিলে চুলের গোড়ার অতিরিক্ত তেল চুষে নেয়। ডিটারজেন্ট বেস-শ্যাম্পু বা ঘন ক্রিমের মতো দেখতে শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না।
  • আপনার চুলে স্বাভাবিক মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন, এটি চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখতে সাহায্য করে থাকে।
  • স্ক্যাল্পে র‌্যাশ, চুলকানি হবে না এরকম শ্যাম্পু বেছে নিবেন।
  • আপনার চুল শুষ্ক হলে ময়েশ্চারাইজার ছাড়া ক্লিয়ার-শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না। ওমেগা থ্রি আছে এমন ময়েশ্চারাইজার শ্যাম্পু ব্যবহার করার জন্য বেছে নিবেন।
  • আপনার চুল কালারড হলে কালারড চুলের স্ক্যাল্প পরিষ্কার করার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। কালারড চুলের জন্য নির্ধারিত শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন।
  • আপনার চুল কোঁকড়ানো হলে কোঁকড়ানো চুলের জন্য ময়েশ্চারাইজিং শ্যাম্পু বেছে নিতে পারেন। সপ্তাহে অন্তত দুবার অলিভ অয়েল বা কাস্টার অয়েল ব্যবহার করবেন। সকালে চুলে শ্যাম্পু করলে চুলের ময়েশ্চার অনেকটা বজায় থাকে।
  • আপনার চুল পাতলা হলে দেখবেন পাতলা চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করার পর সহজে নেতিয়ে যায়। লেবু, ফলের রসসমৃদ্ধ যেসব শ্যাম্পু রয়েছে সেই শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন।কারণ ফ্রুট এসিড চুলের তেল-ময়লা পরিষ্কার করে ও চুলের ভলিউম বাড়াতে সাহায্য করে।

কেমন কন্ডিশনার ব্যাবহার করবেন?

  • আপনার চুল রুক্ষ হলে রুক্ষ চুলে ময়েশ্চার ও প্রোটিনসমৃদ্ধ হেয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন। ভিটামিন-ই , অ্যালোভেরাসমৃদ্ধ হেয়ার কন্ডিশনারও শুষ্ক চুলের জন্য ভালো।
  • আপনার কোঁকড়ানো চুলের স্ক্যাল্পের অয়েল চুলের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত এসে পৌঁছায় না। আপনার কোঁকড়ানো চুলের জন্য ডিপ কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন, যা চুলের ময়েশ্চার বজায় রাখতে সাহায্য করে। জোজোবা অয়েল, অ্যাভোকাডোসমৃদ্ধ হেয়ার কন্ডিশনারও ব্যবহার করতে পারেন।
  • আপনার চুল তৈলাক্ত হলে তৈলাক্ত চুলে জন্য ফ্যাটি এসিড কম থাকে এমন কন্ডিশনার ভালো, যা চুলের সৌন্দর্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • কালার চুলের জন্য বিউটি এক্সপার্টদের পরামর্শ অনুযায়ী যেসব কন্ডিশনার বাজারে পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করবেন।এক্ষেত্রে হারবাল কন্ডিশনার কালার চুলের জন্য আদর্শ।
  • আপনার চুল বেশ কয়েক দিন চুল পরিষ্কার করার পর যদি জট না পড়ে বা ভেঙে না যায়, তাহলে আপনার চুল স্বাভাবিক চুল। স্বাভাবিক চুলের জন্য লিভ অন কন্ডিশনার ভালো কাজে দেয়।

শেষ কথা

আশাকরি আর্টিকেলটিতে দেখানো উপায় ও সমাধানগুলো আপনার চুলকে স্বাস্থ্যবান রাখতে সাহায্য করবে। চুল নিয়ে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Comment