আপনার বয়স যদি ২০-৪৫ এর মধ্যে হয় তাহলে অবশ্যই আপনাকে খেতে হবে লবঙ্গ চা।
মিল্ক টি, গ্রিন টি, লিকার টি, এমন কি লেমন টি-এর কথাও শুনেছি বা শুনেছেন। কিন্তু লবঙ্গ চা…সেটা আবার কি? লবঙ্গ চা মানে হল লবঙ্গ চা। সাধারণ চা এর ক্ষেত্রে গরম জলে দু চামচ চা পাতা ফেলে ফুটিয়ে নিলেই খেল খতম। কিন্তু এক্ষেত্রেও নিয়ম প্রায় একইরকম। প্রথমে একটু পরিমান লবঙ্গ নিয়ে বেঁটে নিতে হবে এবং তারপর এই লবঙ্গের গুঁড়ো এক কাপ জলে মিশিয়ে ৭-১২ মিনিট ফোঁটাতে হবে। যখন দেখবেন যে জলটা ফুটতে শুরু করেছে, তখন এই জলে হাপ চামচ চা পাতা ফেলে দিতে হবে। আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে জলটা ছেঁকে নিলেই হয়ে গেল লবঙ্গ টি। লবঙ্গ টি বানানো এমন কোনও শক্ত কাজ নয়। এই লবঙ্গ টি যে কেউ বানাতে পারবে।
যারা চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা করে থাকেন তাদের মতে যদি প্রতিদিন দুবার করে লবঙ্গ চা খাওয়া শুরু করা হয় তাহলে শরীরের মধ্যে প্রবেশ করতে শুরু করে ভিটামিন- কে, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম সহ আরও একাধিক উপকারি পদার্থ, যা নানাভাবে আমাদের শরীরের উপকারে লাগে। তাই লবঙ্গ টি বা চা খাওয়া শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী।
সূচিপত্র
লবঙ্গ চা খাওয়ার ১০টি উপকারিতা
লবঙ্গ চা খাওয়ার উপকারিতাগুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল।
১. রক্তে শর্করার মাত্রাঃ
বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত এক দশকে আমাদের রাজ্যে বা দেশে যে হারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েছে, তাতে আমাদের দেশ সহ সারা পৃথিবী ডায়াবেটিস ক্যাপিটালে পরিণত হয়েছে। আর সব থেকে বেশি ভয়ঙ্কর বিষয় হল প্রতি বছর নতুন করে এই মারাত্মক রোগে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগেরই বয়স ৪০ বা ৪৫ এর নিচে। এই পরিস্থিতিকে যুব সমাজকে সুস্থ রাখার জন্য একমাত্র ভরসা লবঙ্গ চা। এর কারণ হল এই প্রকৃতিক উপাদান টির মধ্যে উপস্থিত নিগেরিয়াসিন যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করার পর ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাকে অনেকটাই বাড়ায়ে দেয় যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারার কোন সুযোগই পায় না।
২. দেহের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা কমানঃ
বিভিন্ন কারণে অকারনে অনেক সময়ই আমাদের শরীরের অন্দরে প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন রেট বেড়ে যায় ফলে এর খারাপ প্রভাব একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের উপর পড়ে। এর ফলে আমাদের শরীরে নানা রোগ এর বিস্তার লাভ ঘটে। আর এমনটা কিন্তু যে কোন মানুষের সঙ্গে হতে পারে। আর যদি আপনি চান যে আপনার সঙ্গে এই রকম ঘটুক, তাহলে আপনা কে নিয়মিত লবঙ্গ চা খাওয়া শুরু করতে হবে। কারণ এই লবঙ্গ চা খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে। ফলে আপনার শরীরে প্রদাহের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার আর কোনও সম্ভবনা থাকবে না।
৩. ক্যান্সার রোগ দূরে থাকেঃ
লবঙ্গ ক্যান্সার থেকে দূরে থাকতে সহায়তা করে। লবঙ্গের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-ক্যান্সার এজেন্ট। তাই প্রতিদিন যদি লবঙ্গ চা খাওয়া হলে শরীরের ভেতরে ক্যান্সার নিরোধক উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ফলে দেহের মধ্যে ক্যান্সার কোষ জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। যা থেকে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।
৪. দ্রুত আর্থ্রাইটিসের যন্ত্রণা কমানঃ
লবঙ্গের মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ এই (আরথ্রাইটিস. ধরনের হাড়ের রোগের প্রকোপ কমাতে উপকারি ভূমিকা পালন করে। এক কাপ বা গ্লাস লবঙ্গ চা তৈরি করে কয়েক ঘন্টা ফ্রিজে রাখতে হবে। এরপর এই ঠান্ডা লবঙ্গ চা ব্যথা জায়গায় কম করে ২০ থেকে ৩০ মিনিট লাগালে যন্ত্রণা একেবারে কমে যাবে। এছাড়া জয়েন্ট পেন পেশীর ব্যথা এবং বিভিন্ন ফোলা ভাব কমাতে এই লবঙ্গ চা ঔষধি টি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই লবঙ্গ চা শরীরের বিভিন্ন ব্যাথার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে।
৫. স্ট্রেস লেভেল কমানোর জন্যঃ
ডায়াবেটিসের পর এখন যে সমস্যাটা বেশি করে দেখা দিচ্ছে তা হল স্ট্রেস। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতবর্ষের যুব সমাজের বেশিরভাগই এখন স্ট্রেসের শিকার। আর ভয়ের বিষয় যে বিভিন্ন মারণ রোগ এখন এই দেশে দাপাদাপি করছে, তার প্রায় সবকটির সাথেই এই স্ট্রেসের যোগ রয়েছে। তাই এমন মারণ রোগের খপ্পরে পরতে যদি আপনি না চান, তাহলে প্রত্যেক দিন লবঙ্গ চা খান। কারণ এই লবঙ্গ চা এর মধ্যে উপস্থিত বিভিন্ন উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার ফলে ফিল গুড হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এর ফলে স্ট্রেস লেভেল কমতে থাকে।
৬. দাঁত ব্যাথার জন্যঃ
লবঙ্গ এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। আর এই উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কিছু বিক্রিয়া ঘটায় যার ফলে দাঁতের যন্ত্রণা দ্রুত কমে যায়। তাই সবাই বলে দাঁতে ব্যাথা হলে লবঙ্গ চা খেতে। তাই দাঁতে ব্যাথা বা মাড়ি ফোলার মতো যদি ঘটনা ঘটে তাহলে এক কাপ গরম গরম লবঙ্গ চা খেয়ে নিন।
৭. জ্বরের চিকিৎসায়ঃ
লবঙ্গের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকে। যেমন থাকে ভিটামিন কে, ভিটামিন ই ইত্যাদি। আর এই ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে দেয় যার ফলে শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকারক ভাইরাস গুলি মারা যায়। এর ফলে ভাইরাল ফিবারের কোনও আশঙ্কা থাকে না। তাই জ্বরের চিকিৎসায় লবঙ্গ টি খুব ভাল।
৮. সাইনাসের প্রকোপ কমাতেঃ
আপনাকে কি মাঝে মধ্য়ে সাইনাসের আক্রমণ সহ্য করে থাকতে হয়? তাহলে তো অবশ্যই এই প্রবন্ধটি আপনার জন্য। এই প্রকৃতিক উপাদানটি শরীরে উপস্থিত ইগুয়েনাল নামে একটি উপাদান সাইনাসের কষ্ট কমাতে অনেকখানি ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই কারণে তো আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা আজও এই ধরনের অসুখের চিকিৎসার জন্য লবঙ্গ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
৯. হজম ক্ষমতার উন্নতিঃ
দুপুরে বা রাতে খাওয়ার আগে লবঙ্গ দিয়ে তৈরি এক কাপ গরম গরম লবঙ্গ চা খেলে হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ অনেকটা বেড়ে যায়। টা সাথে সাথে পেটের মধ্যে রক্ত প্রবাহেরও অনেকটা উন্নতি ঘটে। এর ফলে খাবার খুব ভাল হজম হয়। তাই যারা কম ঝাল-মশলা দেওয়া খাবার খাওয়া সত্ত্বেও বদ-হজম হচ্ছে, তারা একবার অবশ্যই লবঙ্গ চা পান করে দেখুন। এমনটা করলে আপনার যা উপকার হবে, তা আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না।
১০. নিমেষে করবে সংক্রমণের চিকিৎসাঃ
এবার থেকে যে কোনও ধরনের ত্বকের সংক্রমণ হলেই চোখ বন্ধ করে ক্ষতস্থানে লবঙ্গ চা লাগাতে পারেন। এই রকম করলে কষ্ট কমতে একেবারে সময় লাগবে না। লবঙ্গে উপস্থিত ভোলাটাইল অয়েল শরীরে মধ্যে থাকা টক্সিক উপাদান দের বের করতে সহায়তা করে। তার সাথে সাথে জীবাণু দেরও মেরে ফেলে। এই জন্যই সংক্রমণজনিত কষ্ট কমতে লবঙ্গ চা এর কোন জুড়ি নেই।
শেষ কথা
এছারাও শরীর সুস্থ রাখতে লবঙ্গ-এর উপকারিতা অনেক। তাই আজ থেকেই শুরু করুন লবঙ্গ চা খাওয়া। আপনি পারেন তো সাধারণ চা এর জায়গায় এই লবঙ্গ চা খান। আশা করি এর কোন খারাপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে না। সুস্থ থাকুন এই কামনা করি। ধন্যবাদ।