আমাদের সৌরমণ্ডলের অষ্টম অথবা বলতে পারেন সবথেকে শেষের গ্রহ নেপচুন (Neptune Planet)। নেপচুন গ্রহের রং নীল হওয়ার কারণে এর নাম রোমের সমুদ্রের দেবতা নেপচুনের নামানুসারে রাখা হয়েছে। নেপচুন গ্রহের Mass বা ভর পৃথিবীর তুলনায় ১৭.১৫ গুণ বেশি। নেপচুন গ্রহ আমাদের সৌরমণ্ডলের একমাএ গ্রহ যাকে Mathematic ভাবে Calculate করে আবিষ্কার করা হয়েছিল। কারণ পৃথিবী থেকে নেপচুন গ্রহের দুরত্ব এতটাই বেশি যে কোন টেলিস্কোপ এর সাহায্যে নেপচুনকে সঠিকভাবে দেখা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।
ইউরেনাস আবিষ্কারের প্রায় ৫০ বছর পর ১৮৪৬ সালের ২৩ সেপ্টম্বর নেপচুন গ্রহ আবিষ্কার করেন জার্মান Astronomer Johann Gottfried Galle এবং French গণিতগ্য Urbain Jean Joseph Le Verrier। যদিও এর আগেই গ্যালিলিও নিজের তৈরি করা সৌরমণ্ডলের একটি চিত্রে Unknown একটি নক্ষত্রের কথা বলেছিলেন কিন্তু সেই সময় তিনি এই গ্রহের সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পারেননি। সূর্য থেকে নেপচুন গ্রহের দুরত্ব ৪.৫৪ বিলিয়ন কিলোমিটার যেটা সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্বের ৩০.৩৩ গুণ বেশি।
নেপচুন গ্রহ তার কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় যখন সূর্যের সবথেকে কাছে আসে সেটা হল ৪.৪৬ বিলিয়ন কিলোমিটার যেটা পৃথিবীর দূরত্বের ২৯.৮১ গুণ বেশি। গঠনের দিক থেকে নেপচুন গ্রহের উপরি পৃষ্ট জল মিথেন আর অ্যামোনিয়ার মত তরল পদার্থ এবং হাইড্রোজেন,হিলিয়াম,মিথেন,ইথেন ইত্যাদি গ্যাস দিয়ে তৈরি আর নেপচুন গ্রহের ভিতরের গঠন কেবলমাত্র পাথর দিয়েই তৈরি। আর নেপচুন গ্রহের সারফেসে মিথেনের মতো গ্যাসের উপস্থিতির কারণে নেপচুন গ্রহের উপরের বায়ুমণ্ডল হালকা নীল রঙের হয়ে যায়। কারণ মিথেন লাল রং শুষে নেয় আর নেপচুন গ্রহের সারফেসের উপরে হাল্কা নীল রঙের মেঘ তৈরি করে দেয়।
নেপচুন গ্রহ নিজের অক্ষের উপর একবার পরিক্রমণ করতে ১৬ ঘন্টা ৬ মিনিট সময় নেয় মানে নেপচুন গ্রহে একদিন ১৬ ঘন্টা ৬ মিনিটে হয় থাকে। পৃথিবী যেখানে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে ৩৬৫ দিন সময় নেয় কিন্তু পৃথিবীর হিসাবে নেপচুন গ্রহ সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে ৬০,১৮২ দিন ১৬৪.৮ বছর সময় নিয়ে নেয়। আর এর প্রধান কারণ নেপচুন গ্রহের অরবিট স্পীড এবং সূর্য থেকে নেপচুন গ্রহের দুরত্ব। নেপচুন গ্রহের আয়াতন ৬৩০ হাজার কোটি কিউব কিলোমিটার যেটা পৃথিবীর আয়তনের প্রায় ৬০ গুণ আর Mass বা ভর আমাদের পৃথিবী প্রায় ১৭ গুণ।
নেপচুনের Gravity বা মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সৌরমন্ডলে বৃহস্পতির পর সব থেকে বেশি। নেপচুনের মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের ১১০%। মানে পৃথিবীতে যদি কোন বস্তুর ওজন ১০০ কিলো হয় তাহলে ঐ বস্তু নেপচুনে ১১০ কিলো হয়ে যাবে। ১৯৮৯ সালে নেপচুনের সারফেসে পাওয়া সব থেকে বড় ঝড় দ্য গ্রেট ডার্ক স্পট যেটা ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৪ মানে একটানা ৫ বছর ধরে চলেছিল। এই ডার্ক স্পট এতটাই বড় ছিল যে এর মধ্যে একটা গোটা পৃথিবী চলে যেতে পারত।
আর এর কিছু বছর পরেই The Small Dark Spot নামে আরও একটি ঝড় নেপচুনের সারফেসে Voyager 2 দ্বারা দেখতে পাওয়া যায়। এই Small Dark Spot টা এতটা বড়ো ছিল যে আমাদের পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ এর ভেতরে চলে যেতে পারত। এই সব ঝড়ের গতি ছিল প্রতি ঘন্টায় 2,100 km/h। আর এইসব ঝড় একটানা কয়েক বছর ধরে চলতে থাকে।
১৯৮৯ সালে Voyager 2 এর মাধ্যমে নেপচুনের ছটি রিং সম্পর্কে জানা যায় কিন্তু এই রিং এতটাই পাতলা আর হালকা যে এই রিং-কে সহজে দেখা যায় না। এই রিংস প্রধানত আইস পার্টিক্যেল আর কার্বনবেস্ট সাস্বস্টান নিয়ে গঠিত। নেপচুনের উপরই পৃষ্ঠের তাপমাত্রা -২০১ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেট আর এই কারণেই নেপচুনকে; গ্রহের মধ্যে সবথেকে ঠান্ডা গ্রহ মনে করা হয়। যদিও নেপচুনের সবথেকে বড় উপগ্রহ Triton নেপচুনের থেকেও বেশি ঠান্ডা -২৪০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেট। আজ পর্যন্ত নেপচুনের প্রায় ১৪ টি উপগ্রহের কথা জানা গেছে। যার মধ্যে Triton সবথেকে বড় আর একমাত্র গোল আকারের। মনে করা হয় Triton নেপচুনের অন্যান্য উপগ্রহের তুলনায় উল্টোদিকে পরিক্রমণ করে।